মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর প্রতিনিধি:
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের অলি গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ফার্মেসি বা ঔষধের দোকান। ঔষধ প্রশাসনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ও মুদিখানার দোকানে অনেকেই ফার্মেসি দোকান দিয়ে করছেন মানহীন ও ভেজাল ঔষধ ব্যবসা। এসব ফার্মেসি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ ভারতীয় সেক্সুয়াল ও নিম্নমানের নানা ধরনের ঔষধ বিক্রি করছে অবাধে। এ ছাড়া নেই কোনো প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট। ফলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক রোগী ও তাদের পরিবার-পরিজন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ বিভিন্ন বাজারে গড়ে উঠেছে ফার্মাসিস্ট, প্রশিক্ষণ ছাড়া ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন শত শত ফার্মেসি। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নওয়াপাড়া ক্লিনিকপাড়া, বউবাজার, ধোপাদি নতুনবাজার, চেঙ্গুটিয়া বাজার, ভাঙ্গাগেট, মথুরাপুর, দেয়াপাড়া নতুনবাজার, রাঙ্গারহাট, সিদ্দিপাশা আমতলা, পায়রা বাজার, রাজঘাট, চলশিয়া, ফকিরহাটসহ সকল ছোট বড়ো বাজারে দেদারছে চলছে জমজমাট ঔষধের ব্যবসা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে মথুরাপুরের একটি দোকানে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়াই ঐ এলাকার শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, এমনকি অন্তঃসত্তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছেন ঐসব ফার্মেসি মালিকগুলো। কারণ ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যায়না। তারা তাদের পাশ্ববর্তী বাজার গুলোতে ফার্মেসির শরণাপন্ন হয়ে রোগের বর্ণনা দিয়ে ওষুধ নেন। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ফার্মেসিগুলো, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রায় এজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ট্যাবলেট, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ, ভারতীয়, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা ধরনের ঔষধ অবাধে বিক্রি করে আসছে। ৫নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার সব ইউনিয়নের বাজারগুলোর চিত্র একই। কিছু কিছু বাজারে মুদি দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক ঔষধ। যার ফলে একদিকে যেমন অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪০ অনুসারে কারও ঔষধের দোকান বা ফার্মেসি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রথমেই কমপক্ষে ছয় মাসের ফার্মাসিস্ট কোর্স করে সনদ সংগ্রহ করতে হবে। পরে সংশ্নিষ্ট ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ফার্মাসিস্ট সনদ জমা দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারায় ‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামে উল্লেখ্য আছে, কোন খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঔষধ বিক্রি হচ্ছে এসব ফার্মেসিগুলোতে। কয়েকজন সচেতন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন ফার্মেসিতে আর বিশেষজ্ঞ লোকের দরকার হয় না। ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভরা বলে দেন কোন ঔষধ কী কাজে লাগে। সেই অনুযায়ী ঔষধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া অনেক ঔষধের দোকানে নিম্নমানের ঔষধ স্যাম্পল গুলো কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা বিক্রি করে দেন। ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালোমানের ঔষধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন নেওয়া হচ্ছে। এতে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন ঔষধ ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও কোন ঔষধটি আসল আর কোনটি ভেজাল তা চিহ্নিত করতে পারেনা। এর ফলে এ ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের বাণিজ্য দিন দিন জমজমাট হচ্ছে, আর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অভয়নগর উপজেলার অবৈধ ফার্মেসিগুলো সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের ভেজাল ঔষধ বেশি মূল্যে বিক্রি করছে, যা রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে উল্টো নানা উপসর্গের সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া অসচেতন রোগীদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে উল্লিখিত ঔষধের একই গ্রুপের নিম্নমানের ঔষধ সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, ড্রাগ লাইন্সেস ও ফার্মাসিস্ট সনদ ছাড়া কোন ঔষধের দোকান বা ফার্মেসি ব্যবসা করা যাবে না। লাইন্সেসবিহীন সকল ফার্মেসিগুলোতে দ্রুত আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।