মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর প্রতিনিধিঃ
দক্ষিন নড়াইল ও অভয়নগর সীমান্তে চাকই-মরিচা-ভবানিপুর বাজারের ভবানিপুর অংশে খাস জমি ডি সি আর কেটে সেমি পাকা ঘর তৈরী করে সৌমিত্র কুমার রায় নামে এক ব্যাক্তি বিক্রি করেছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ০৯/১০/২০২২ ইং তারিখে অনুসন্ধানের জন্য ডি সি আর কৃত জমিতে গেলে দেখা যায় ছোট বড় প্রায় ৩০ টা সেমিপাকা দোকান ঘর নির্মাণ কাজ চলছে, যার মধ্যে প্রায় ১০ টি ঘর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষও হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাজার ব্যাবসায়ীদের একাংশ বিশেষ করে ব্যাবসায়ী হুমায়ুন মোল্যা, ইসমাইল হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন, কবির হোসেন, তারা সকলেই জানালেন ঘরগুলি স্বপন কুমার বিশ্বাসের ভাই সৌমিত্র কুমার রায় বিভিন্ন দোকানদারদের নিকট লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছেন, আরো বলেন জমির ডি সি আর আছে কি না দেখতে চাইলে আমাদের দেখাইনি তাই মনে করছি ঐ জমি খাসই আছে আর খাস জমি ডি সি আর করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দোকানদারদের নিকট থেকে অবৈধভাবে টাকা নিচ্ছে। ভাড়া চুক্তিতে ঘর নিয়েছেন টিন ব্যাবসায়ী সুজন ট্রেডার্স এর মালিক, তিনি জানান আমি ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি ঘর করে দেয়ার জন্য। টিন ব্যাবসায়ী মুরাদও জানান একই কথা। আড়ৎদার মুনসুর মোল্যা জানালেন আমি ঘর করার জন্য ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছি। ঘর নিয়েছেন এরকম আরো অনেকেই যেমন নওয়াব আলী, ডালিম শেখ, করিম শেখ, মতিন শেখ সহ অনেকেই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইনি। তবে যারা টাকা দিয়েছেন তারা টাকা দেয়ার পক্ষে কোন প্রমান বা ভাড়া/লিজ চুক্তিপত্র দেখাতে পারেনি।
বাজার বনিক সমিতির সভাপতি মোঃ কিবরিয়া জানালেন সৌমিত্র কুমার রায়ের নিকট থেকে কেউ ঘর লিজ বা ভাড়া নিয়েছেন বা নিচ্ছেন এরকম কোন তথ্য আমার জানা নেই।
কথা হয় অভয়নগর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা থান্দার কামরুজ্জামানের সাথে তিনি জানান ডি সি আর দেয়া হয়েছে এটা সঠিক এবং সেমিপাকা ঘর করার অনুমতিও আছে এটাও সঠিক তবে অন্য কাউকে সাবলিজ বা ভাড়া দিতে পারবেনা, শুধু নিজেরা ব্যাবহার করতে পারবে। তিনি আরো জানালেন অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করতে এসে সাবলিজ বা ভাড়া দিয়েছেন তার প্রমান পেয়েছি। কি প্রমাণ পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কয়েকজন দোকানদার তাঁর নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যে তারা সৌমিত্র কুমার রায়কে টাকা দিয়েছে, তবে অভিযোগের সাথে টাকা দেয়ার প্রমান হিসাবে কোন লিজ বা ভাড়া চুক্তিপত্র দেয়নি।
প্রতিবেদকের হাতে এলো ডি সি আর এর কপি, তাতে দেখা যায় যশোরের অভয়নগর উপজেলায় জে এল নং ২১ এর ভবানিপুর মৌজায় ৬১(এসএ) নং খতিয়ানে ৩৯, ৪২, ৪৩ দাগে ০১(এক) শতাংশ স্থাপনা ও ৬৯ (উনসত্তর) শতাংশ বানিজ্যিক শ্রেনীর, মোট ৭০ শতাংশ জমি অত্র উপজেলার কোদলা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে গত ২২/০২/২০২২ তারিখে অভয়নগর ভূমি অফিস হইতে ০৫৪৯৯৬ নং রশিদের মাধ্যমে ১৫,২৫০(পনের হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকার বিনিময়ে ডি সি আর মূলে বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত জমিতে সেমিপাকা ঘর নির্মাণের অনুমতিও দেয়া হয়।
এবার কথা হয় সেই সৌমিত্র কুমার রায়ের সাথে, তিনি বলেন ডি সি আর এর জমি বিক্রি করা যায় এটা আমার জানা নাই, যারা বলছে তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে, ডি সি আরকৃত জমিতে সেমি পাকা ঘর করার অনুমতি থাকায় আমি নিজেই সবগুলো ঘর করতেছি, তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন বিক্রিতো দূরের কথা ভাড়া বা লিজ হিসাবে কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নেয়নি, যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে পারে কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নিয়েছি তাহলে সকল অভিযোগ মেনে নিবো।
একদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের খাস জমি বিক্রির অভিযোগ, আরেকদিকে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার নিকট লিজ বা ভাড়া দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ, অন্যদিকে অধিকাংশ দোকান্দাররা মুখ খুলছেনা, কিন্তু কোন অভিযোগের স্বপক্ষে কোন প্রমান মিলছেনা। এমন অবস্থায় অভয়নগর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ঘর নির্মাণের কাজ স্থগিত রেখেছেন।