ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা কোম্পানি লিমিটেডে (এএফসিসিএল) তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না চুক্তিভিত্তিক ৭৩ জন শ্রমিক। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা, তথ্য গোপন ও কার্যাদেশ পরিবর্তনের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থকষ্টে দিন পার করছেন। অনেকে জানিয়েছেন, গত কোরবানির ঈদে পশু কিনতে পারেননি। সন্তান ও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
শ্রমিকদের দাবি, আদালতের স্থিতাবস্থা রায় সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ডিরেক্টরসকে বিষয়টি জানায়নি বরং গোপনে আউটসোর্সিং নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং আগের কার্যাদেশ সংশোধন করে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বন্ধ করে দেয়।
কারখানা প্রশাসন বিভাগ বলছে, এসব শ্রমিক ঠিকাদারের মাধ্যমেই বেতন পেয়ে আসছেন এবং বর্তমানে তাদের বেতন ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। তবে শ্রমিকরা জানান, তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে বেতন নিতে রাজি নন এবং আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কোম্পানির মাধ্যমেই নিজের ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী পাওনা বুঝে নিতে চান।
জানা গেছে, বিগত ২০২২ সালে ৭৩ জন শ্রমিক চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে শ্রম আদালতে মামলা করেন। আদালত তাদের চাকরিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতও শ্রমিকদের পক্ষে রায় দিয়ে পূর্ববর্তী সুবিধা বহাল রাখার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু এরপরও কারখানা কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের মার্চে একাধিকবার কার্যাদেশ পরিবর্তন করে, যাতে বেতন প্রদানের নিয়ম পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রে প্রথম কার্যাদেশে বেতন কোম্পানি দেবে বলে উল্লেখ থাকলেও পরে সেটি বাদ দেয়া হয়।
শ্রমিক আল-আমিন জানান, ‘বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে চোখে পানি চলে আসে। ঈদে কোরবানি দিতে পারিনি। এমন কষ্ট কখনো পাইনি।’
শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৮৭ সাল থেকে কাজ করছি। সন্তানরা এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অথচ বাড়িতে নুন-চিনির টাকাও নেই।’
এছাড়া খুরশেদ, উজ্জ্বল সূত্রধর, সুমন মিয়াসহ অনেকে জানান, দীর্ঘ সময় কাজ করেও এখন যেন তাদের অদৃশ্য করে রাখা হয়েছে।
তবে কারখানার ডিজিএম (প্রশাসন) মো: তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া দাবি করেন, ‘আগে থেকে এসব শ্রমিক ঠিকাদারের মাধ্যমেই বেতন পেতেন। কার্যাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে, তা ছাপার ভুল। আদালতের বিষয়টি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন।’
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার নাথ বলেন, ‘বেতন-ভাতার চেক ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। বেতন পাচ্ছেন না, এমনটি নয়।’
তবে শ্রমিকরা বলছেন, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তারা সরাসরি ব্যাংক হিসাবে কোম্পানি থেকে বেতন চান, যাতে আইনি প্রক্রিয়ার সম্মান বজায় থাকে।