এম এইচ মুন্না —
রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত একজন প্রধান প্রকৌশলী যখন নিজের স্ত্রীর নামে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণে সম্মতি প্রদান করেন, তখন প্রশ্ন ওঠে—এই সিদ্ধান্ত কি কেবল পারিবারিক, নাকি এর গভীরে লুকিয়ে আছে আরও বড় কোনো উদ্দেশ্য, অবৈধ পুঁজি বিনিয়োগ অথবা প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা?
সম্প্রতি পাওয়া এক সম্মতিপত্র অনুযায়ী, মোঃ আব্দুর রশিদ মিয়া, যিনি নিজেকে “প্রধান প্রকৌশলী” হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী ফাতিমা যাকিয়াহ্-এর পক্ষে ১৪০ কোটি টাকা ঋণ নিতে সম্মতি প্রদান করেছেন। যদিও দলিলটি এক প্রকার ‘ব্যক্তিগত সম্মতিপত্র’—তবু সেটির ভাষা, পরিমাণ এবং পেশাগত অবস্থান বিবেচনায় বিষয়টি মোটেই নিরীহ নয়।
একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি প্রকল্প, বাজেট ও ঠিকাদারি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত, তিনি যখন এমন বিপুল অংকের অর্থের অনুমোদন ব্যক্তিগত পরিসরে দেন—তখন নৈতিকতা, স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার প্রশ্নে এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা তাঁর পরিবার-পরিজনের আর্থিক লেনদেনে এই ধরনের প্রত্যক্ষ সম্মতি দিতে পারেন না, যদি না তা স্বচ্ছভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রশ্ন উঠছে—এই ১৪০ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে, কারা দিবে, কেন দিবে, এবং আদৌ এই অর্থ কি কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাটি সাধারণভাবে ‘ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেন’ বলেই চিহ্নিত হলেও, এর মাধ্যমে অর্থপাচার, অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত অস্বীকার করা যায় না।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, এত বিপুল পরিমাণ অর্থের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ, বিনিয়োগ বা চুক্তি সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হতে হয়। কিন্তু এখানকার প্রেক্ষাপটে, একটি নামমাত্র কাগজে স্বাক্ষর করে প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীর পক্ষে কোটি কোটি টাকার দায়ভার গ্রহণ করার যে প্রচেষ্টা, তা স্পষ্টতই অসংগতিপূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ।
এ বিষয়ে জানতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশিদ মিয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো সত্ত্বেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চলবে….