1. info@dainikgonatadanta.com : দৈনিক গণতদন্ত :
সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞাপন:
জরুরী নিয়োগ চলছে, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, ক্যাম্পাস ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি বা সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

কেন জনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে বারবার এসব ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে?

রিপোর্টারের নাম :
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

 

উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৯ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি ও দেড় শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় গোটা জাতি শোকাহত। আহতদের অনেকেই দগ্ধ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের আকাশ ও মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এক ভয়াবহ ব্যর্থতার নগ্ন প্রকাশ।

নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে উড্ডয়ন করা একটি যুদ্ধবিমান রাজধানীর অভ্যন্তরে, তাও আবার জনবহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া নিছক ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রশ্ন উঠে- কেন এখনো পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ বিমান দিয়ে প্রশিক্ষণ চালানো হচ্ছে? কেন জনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে বারবার এসব ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে?

এ ঘটনায় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের তৎপরতা প্রশংসনীয় হলেও প্রশ্ন থেকে যায়— দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পূর্ব প্রস্তুতি কোথায় ছিল? স্থানীয় বাসিন্দারা ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু আগে থেকেই এই এলাকা দিয়ে যুদ্ধবিমান চলাচল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বিভিন্ন সময় ভিডিও ভাইরালও হয়েছিল। কেউ কি গুরুত্ব দিয়েছিল?

প্রচলিত আইনে কিংবা সংবিধানে জননিরাপত্তার দায় রাষ্ট্রের। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখন তদন্ত কমিটি হচ্ছে— কিন্তু এ পর্যন্ত আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এসব কমিটির প্রতিবেদন কখনোই প্রকাশ্যে আসে না, দোষীদের চিহ্নিত করা হয় না। দায়ীদের শাস্তি তো দূরের কথা, ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বরং ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার’ অজুহাতে সব ধামাচাপা দেওয়া হয়।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের আর্তনাদ, সন্তানের পোড়া শরীর আর অচেনা ভবিষ্যতের মুখোমুখি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখের জলের কাছে আজ রাষ্ট্রীয় ভাষণ, পতাকা অর্ধনমিত, একদিনের শোক— এসব সবই যেন এক প্রহসন।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিলো, এই দেশে শিশুদের শিক্ষা জীবন, নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা কতটা অনিশ্চিত, কতটা ঠুনকো। রাষ্ট্র যখন নিজের আকাশে নিরাপদে উড়তে পারে না, তখন নাগরিকের জন্য সে কী দিতে পারে?

অথচ এই একই রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকার অস্ত্র কেনে, সামরিক বাহিনীর বাজেট দিন দিন বাড়ায়, অথচ পুরনো যুদ্ধবিমান বাতিল করে নতুন প্রযুক্তি কেনার ক্ষেত্রে থাকে অবহেলা ও কালক্ষেপণ। যার খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষকে।

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই ঘটনার দায় কেবল যান্ত্রিক ত্রুটির নামে ঢেকে রাখা যাবে না। দায় রয়েছে প্রশাসনিক অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে— না হলে এই মৃত্যু, এই দুঃখগাথা বারবার ফিরে আসবে।

এই দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। একইসাথে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই— যেন তদন্ত রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়। যেন দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হয়। যেন ভবিষ্যতে আর কোনো স্কুল, কলেজ, শিশুর জীবন— এই অবহেলার বলি না হয়।

রাষ্ট্রীয় শোকের পাশাপাশি চাই বাস্তবিক, কার্যকর পদক্ষেপ। শোকের নামে দায় এড়িয়ে যাবার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার এখনই সময়।

‘শিশুদের মৃত্যু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন আর পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন— এসব আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লজ্জা, ব্যর্থতা ও ভয়ংকর সতর্কবার্তা।’

লেখক:
এম এইচ মুন্না
প্রধান সম্পাদক | দৈনিক গণতদন্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট