মোঃ হাইউল উদ্দিন খান,গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে এমপি প্রার্থী ও একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি সন্ত্রাসী এনামুল হক মোল্লাকে বিপুল অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ দল।
শ্রীপুরে যৌথ বাহিনীর মধ্যরাতের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে পরিচালিত এ অভিযানে আরও ছয় সহযোগীকে আটক করা হয়।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মেজর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীর (৪৬ ডিভ লোকেটিং) এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে অন্যান্য আটকরা হলেন শওকত মীর, জাহিদ, মোস্তফা, সিদ্দিক, বুলবুল ও তোফাজ্জল।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় —দুটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, চারটি ওয়াকিটকি, চারটি লাঠি (বেটন), দুটি ইলেকট্রিক শক মেশিন, একটি হ্যামার নেল গান এবং একটি ধারালো চাকু।
অভিযান শেষে আটককৃতদের যৌথ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন ও বিএনপি ব্যানারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
যৌথ বাহিনীর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই। আটককৃতরা সংগঠিতভাবে অস্ত্রধারী হয়ে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করছিল। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত আলামত এসেছে, যা দিয়ে পরবর্তী তদন্তে বড় নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, সে টুপি-দাড়ি পরে ধর্মীয় ভাব দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিত। কিন্তু রাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে শুনে সবাই হতবাক।
আরেকজন এলাকাবাসী জহিরুল বলেন, বিএনপির নাম ব্যবহার করে সে এলাকায় ভয় দেখাত। সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে এখন।
স্থানীয় বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এনামুল হক দলের কোনো অনুমোদিত প্রার্থী নয়। তার কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেছেন, ধর্মের মুখোশ পরে সন্ত্রাসের রাজনীতি করা ব্যক্তিদের এখনই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এনামুল হক মোল্লা সৌদি আরবের মেসফালাহ শাখা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। দেশে ফিরে এমপি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত চারটি অস্ত্র মামলা ও দুটি নাশকতার মামলা চলমান।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছে। যৌথ বাহিনী জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবদুল বারিক জানান, এনামুল হক মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এবার যৌথ বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়ায় বড় একটি সন্ত্রাসী চক্রের পতন ঘটেছে। তবে তার বিএনপি সংশ্লিষ্টতা আমার জানা নেই।