
লুৎফর রহমান হীরা, (চাটমোহর) পাবনাঃ
পাবনা,নাটোর ও সিরাজগন্জ জেলা মিলে চলনবিল। চলনবিল অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে শীতের দাপট। সকাল-সন্ধ্যায় ঘন কুয়াশা জমে পথঘাট সাদা হয়ে থাকে, অনেক জায়গায় সকাল ৯টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। স্থানীয়দের ধারণা, এ বছর শীতের তীব্রতা গত বছরের তুলনায় আরও বেশি হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষজন।
সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন গ্রাম—হামকুরিয়া, চিনাশিকন্দর, মুরারিপুর, চাটমোহর-নন্দনপুর সড়ক ও বিলপাড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের কারণে মানুষের স্বাভাবিক কাজের সময় কমে গেছে। অনেক দিনমজুর সকালে কাজে বের হতে পারছেন না। ভ্যান ও অটোচালকদের আয়ও হ্রাস পেয়েছে।
হামকুরিয়ার ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন,
শীত অনেক বেশি পড়ছে। মনে হয় গত বছরের চেয়ে তীব্র হবে। শীত বাড়লে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে যায়। পরিবার নিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে।
চিনাশিকন্দরের কৃষক আব্দুল মতিন জানান,
ভোরে জমিতে কাজ করতে পারছি না। কুয়াশা থাকে খুব ঘন। সব কাজ পেছাতে হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনেও প্রভাব পড়তে পারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন বলেন,
হাটে-বাজারে লোকজনের আনাগোনা কম। সকাল-বিকেল দুই সময়েই ব্যবসা কমে গেছে।
শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিভিন্ন দোকানে গরম কাপড় কেনার ভিড়ও বেড়েছে। লেপ-তোষক, সোয়েটার, টুপি, মাফলারের দোকানে ক্রেতার চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার গরম কাপড় কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
রোগবালাই বাড়ছে, শিশু-বয়স্করা ঝুঁকিতে
চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের নিচের শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এসব রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন,
শীতপ্রবাহ বাড়লে শিশু ও বৃদ্ধদের জটিল শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাই শীত মোকাবিলায় বাড়তি সতর্কতা দরকার।
আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা
পাবনা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মতে, উত্তরের ঠান্ডা বাতাস এবং চলনবিলের জলাশয় এলাকায় তাপমাত্রা দ্রুত কমছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারিতে কয়েক দফা শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
এক কর্মকর্তা জানান,
চলনবিল এলাকায় জলাশয় বেশি থাকায় তাপমাত্রা দ্রুত নেমে যায়। এ বছর শীত একটু বেশি মাত্রায় অনুভূত হতে পারে।
সহায়তা চায় সাধারণ মানুষ
নিম্ন আয়ের মানুষজন শীত মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সময়মতো সহায়তা না পেলে শীতে তাদের কষ্ট আরও বাড়বে।
চলনবিলে শীতের আগাম দাপটে জনজীবন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি জীবিকার ওপরও পড়ছে বড় ধরনের প্রভাব। দিন দিন তীব্রতা বাড়ায় শীত এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।