
মোঃ নয়ন শেখ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
চিত্রা আমার নদী বইছে নিরবধি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নড়াইলের চিত্র শিল্পী এস এম সুলতানের ৯৮ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চিত্রা নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এস এম সুলতান নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(২২ অক্টোবর) বিকালে জেলা প্রশাসন ও শিল্পী এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বরাবরের মত এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নৌকা বাইচ উপভোগ করতে সকাল থেকেই শেখ রাসেল সেতু সংলগ্ন চিত্রা নদীর দুই পাড়ে ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, খুলনা, নড়াইলসহ কয়েকটি জেলার কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ একত্রিত হন। শেখ রাসেল সেতু থেকে বাইচ শুরু হয়ে শেষ হয় এস এম সুলতান সেতুতে গিয়ে।
লাখো মানুষের ঢল নামে চিত্রা নদীর দুই পাড়ে। নদীর দুই ধারে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রীর মেলা বসেছিল। নৌকা বাইচ শুরুর আগ মুহূর্তে সংগীতের তালে তালে দাঁড়িয়াদের ছন্দময় দাঁড় নিক্ষেপে নদীর পানি ময়ূরপঙ্খির মতোই ঝিলমিল করে চিত্রার বুকে। উল্লাসে মেতে উঠেন নদীপাড়ের বাইচ ও মেলা উপভোগ করে দর্শকরা। বিভিন্ন নৌকায় চড়ে দর্শনার্থীদের বাইচের তালে তালে নাচানাচি করতে দেখা গেছে।
বেলুন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান এস এম সুলতান নৌকা বাইচের শুভ উদ্বোধন করেন। নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে, উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন, জেলা আ. লীগের সভাপতি নব নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল সদর পৌর মেয়র আঞ্জুমানারা বেগম, এস এম সুলতান নৌকা বাইচের সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
এস এম সুলতান নৌকা বাইচে জেলা প্রশাসনের আমন্ত্রনে আনন্দ দেওয়ার জন্য এবার প্রথম দুটি ময়ূরপঙ্খি নৌকা চিত্রার বুকে দেখা গিয়েছে।
মাশরাফি বিন মোর্তজার বাবা গোলাম মোর্তজা স্বপন বলেন, এস এম সুলতান আমাদের নড়াইলের গর্ব। উনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন ব্যক্তি। তার নামানুসারে এ নৌকা বাইচ সুলতান মেলা আমাদের একটা আবেগের জায়গা। হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন জেলা থেকে নৌকা বাইচ উপভোগ করতে আসছে এতে আমরা গর্ব বোধ করি।
পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, নড়াইল ঐতিহ্যের একটা জেলা। এই অনুষ্ঠানটা সবার অনুষ্ঠান। সবাই নৌাকা বাইচ সুন্দর ভাবে যেন উপভোগ করতে পারে সেজন্য আমরা ট্রাফিক টা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছি। অনুষ্ঠান শেষ করে নির্বিঘ্নে যেন সবাই বাড়ি যেতে পারে সেজন্য জেলা পুলিশের বিভিন্ন টিম মাঠে রয়েছে।
এস এম সুলতান নৌকাবাইচের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, নড়াইল জেলার প্রানের উৎসব নড়াইল বাসীর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার এই উৎসব প্রায় দুই যুগ ধরে ধারাবাহিক ভাবে হয়ে আসছে। মহিলাদের ৪টি নৌকা সহ মোট ২০ টি নৌকা এই উৎসবে প্রতিযোগিতা করছেন। টালাই, কালাই সহ অলংকৃত নৌকা রয়েছে। গত বছরের চেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে এবারের নৌকা বাইচ আয়োজনের নেপথ্যে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্তজা। এছাড়া ও উপজেলা চেয়ারম্যান, চেম্বার অব কমার্স সভাপতি, সহ অন্যান্য যারা আমাদের এই উৎসব আয়োজনে অর্থনৈতিক সহ সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই৷
এস এম সুলতান নৌকা বাইচের প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমার বাড়ি পানির দেশ সুনামগঞ্জে। ওখানে নৌকা বাইচ হয়, একটা গান হয় ‘ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে’ আশাকরি এখানেও সেই গানটা শুনতে পাবো। নৌকা বাইচ আমাদের গ্রাম বাংলার লোকজ উৎসব এর একটা অংশ। আধুনিকতা সাথে সাথে বাংলাদেশের অনেক পরিবর্তন এসেছে, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাডুডু, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবাধা, নৌকা বাইচ অনেক কিছু আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা চাই উন্নয়নের সাথে সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গুলো ফিরে আসুক। শুনেছি এখানে নৌকা বাইচ অনেক বছর যাবৎ হয়ে আসছে। নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে নড়াইল বাসীকে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে এ আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে এটা অব্যাহত থাকুক ও আরো বর্ধিষ্ণু পরিবেশ আয়োজিত হোক সেই কামনা করি। চিত্রা নদী অনেক সুন্দর। বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিকর উন্নয়ন হোক সেই প্রত্যাশা করি।
বাইচে অংশ নেয় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছোট-বড় ২০টি নৌকা, তার মধ্যে ৪ টি নৌকা মহিলারা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
তাদের মধ্যে কালাই বাইসে- ‘কালাই মা শীতলা’, নিকুঞ্জ কুমার মন্ডল, গোপালগঞ্জের ১ম, ‘মায়ের দোয়া’, আতর আলী মাগুরার ২য়, ‘সোনার তরী’, ওসমান মিয়া, গোপালগঞ্জের ৩য় স্থান অর্জন করেন।
টালাই বাইসে-‘সোনার বাংলা’, খুলনার ১ম, ‘জয় মা দুর্গা’ মোকসেদপুর, গোপালগঞ্জের ২য়, ‘জয় মা কালী’, বন্যাখালী, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের ৩য় স্থান অর্জন করেন।
এছাড়াও নারী দলের মধ্যে- ‘চিত্রকলী’ নড়াইলের ১ম, ‘কুসুমকলী’, নড়াইলের ২য়, এবং ‘গানের পাখী’
৩য় স্থান অর্জন করেন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।