মোঃ হাইউল উদ্দিন খান,গাজীপুর প্রতিনিধি:
টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল ও কাশিমপুর ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাল খতিয়ান, ভুয়া দলিল, অতিরিক্ত নামজারি, মিথ্যা প্রতিবেদন ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন গাজীপুরের গোবিন্দবাড়ি মৌজার ৪৮টি পরিবার। দীর্ঘদিনের ভূমি হয়রানির প্রতিবাদে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা গাড়ি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে মাটিতে বসে পড়েন ও শুয়ে থাকেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—“গাড়ি চলবে না, যদি চলে তবে আমাদের লাশের ওপর দিয়েই চলতে হবে।”
অভিযোগকারীরা জানান, তাদের ১১৪২০৯৫৭ নম্বর নামজারি আবেদনটি নয় মাস ধরে অকারণে স্থগিত রাখা হয়েছে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ মোকদ্দমার একটি প্রতিবেদন চার মাস ঝুলিয়ে রেখে পরবর্তীতে ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে জোতে জমি নেই দেখিয়ে ৮৬৭৯৫৯৭৯৫ নম্বর নামজারি আবেদন বাতিল করা হয়। ভুক্তভোগীদের দাবি—এসব কারসাজির সহায়তায় হযরত ও মান্নান গং একটি ভূমিদস্যু চক্র তাদের জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
তাদের আরও অভিযোগ, গোবিন্দবাড়ি মৌজার নামে ২০১০ ও ২০১২ সালের এসএ ১৫৪ নম্বর খতিয়ান এবং ১৯৮৬ সালের দুটি দলিল রেকর্ড রুম ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগকারীদের দাবি—এই নথিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে গায়েব করে জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। ২০১০ সালে জব্দ করা একটি জাল খতিয়ানও টঙ্গী অফিস থেকে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়েছে।
এ ছাড়া কাশিমপুর ভূমি অফিসের সাবেক নায়েব অবসর নেওয়ার পরও গোপনে অফিসে কাজ করে পুরনো তারিখে নানা অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে ৬ অক্টোবর ভোর ৩টায় বিরোধপূর্ণ জমিতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে অস্বাভাবিক নোটিশ পাঠানো হয়, যা ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল বলে তারা দাবি করেন।
পরিবারগুলো আরও বলেন, মোকদ্দমায় নিজেদের পক্ষে রায় পাওয়ার পরও দুই বছর ধরে রেকর্ড সংশোধন আটকে রাখা হয়েছে। এই সুযোগে ভূমিদস্যুরা তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়, যাতে কয়েকজন আহত হন। যদিও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে হযরত গং দাখিল করা নথিপত্র জাল প্রমাণিত হয়েছে, তবুও মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা সেগুলো বৈধ হিসেবে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ৪৮ পরিবারের দাবি—ঝুলে থাকা নামজারি ও মোকদ্দমার দ্রুত নিষ্পত্তি, গায়েব হওয়া নথির তদন্ত, জাল নথি প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা।