সোহেল রানা, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
প্রচণ্ড স্রোতে তীব্রভাবে ভাঙছে নদীর পাড়। মুহূর্তেই মাটি গিলে নিচ্ছে মাঠ-ঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে জীবনভর সঞ্চয়, বিলীন হচ্ছে চেনা ঠিকানা। যেন প্রতিদিন মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, অথচ নদীর এই ভাঙন একটুও থামে না।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর, হোকডাঙ্গা ও জুয়ান সাঁতরা এলাকায় তিস্তা নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ১১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওই ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি গ্রামের ভিটেবাড়ি, কৃষিজমি ও ফসলি ক্ষেত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে গৃহহীন হয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
আব্দুল কাউম ফকির বলেন, “আমি যদি সময়মতো ঘর না সরাতাম, তাহলে আজ সেটি নদীতে ভেসে যেত।” ভুক্তভোগী গফ্ফার আলি জানান, “আমার ৫২ শতক ফসলি জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। আর কয়েক দিন পর ধান কাটার কথা ছিল, কিন্তু সবকিছু এখন নদীতে হারিয়ে গেছে। আমার স্বপ্ন এখন তিস্তার পানিতে ভেসে যাচ্ছে।” মোছা. ছালেহা বেগম বলেন, “আমরা ২০ বারেরও বেশি বাড়িঘর ভেঙে অন্যের জমিতে ঘর তুলেছি। এখন যেখানে আছি, সেখানেও আজ রাতেই ভেঙে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।” স্থানীয় বাসিন্দা জহরুল, ফুলবাবু, আবদুল ও জলিল মিয়া বলেন, “যেভাবে পানি বাড়ছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব নদীতে তলিয়ে যাবে। আমরা চাই দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
ইতোমধ্যে কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কেউ আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউবা ভাসমান জীবনে বাধ্য হয়েছে। কৃষিজমি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। এছাড়া স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও ধর্মীয় স্থাপনাও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, “ভাঙন পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “এখানে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙনরোধে পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।