1. info@dainikgonatadanta.com : দৈনিক গণতদন্ত :
শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞাপন:
জরুরী নিয়োগ চলছে, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, ক্যাম্পাস ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি বা সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

দালাল বসে কম্পিউটারে, এসিল্যান্ড দেয় হুমকি- এটাই কি সরকারি দপ্তর?

রিপোর্টারের নাম :
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে

 

সরকারি অফিসের দেয়ালে লেখা ‘জনসেবা’, ভিতরে দালালের মঞ্চস্থ নাটক। কুড়িগ্রামের উলিপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ২০২৫ সালের ৯ জুলাই যা দেখা গেছে, তা নিছক একটি প্রশাসনিক ব্যত্যয় নয়—এ এক প্রশাসন-পরিচালিত দালাল রাষ্ট্রের প্রকৃত মুখচ্ছবি।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম তাঁর দপ্তরের চেয়ারে বসে রয়েছেন, আর সামনে বসে এক অজানা, অপ্রত্যয়িত বহিরাগত ব্যক্তি সরকারি কম্পিউটারে কাজ করছে—যেন তার সামনে খুলে রাখা হয়েছে রাষ্ট্রের গোপন দরজা। কর্মকর্তা নিরুত্তাপ, নির্বিকার—বহিরাগত দালাল সেখানে যেন অলিখিত দপ্তর সচিব। ‘কে?’—প্রশ্নে উত্তর আসে ‘কম্পিউটার অপারেটর’। অথচ সরকারি স্টাফরাই জানিয়ে দেন, এই ব্যক্তি কোনোভাবেই অফিসের লোক নয়। আর সেই অপারেটরকে নিয়েই এসিল্যান্ড মুখ খুলে দেন সাংবাদিককে কুৎসিত ভাষায়। যেন গোপনকে প্রকাশ করাই অপরাধ।

প্রশাসনিক গোপনীয়তা যে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তা এখানে অনুধাবনযোগ্য নয়, বরং দৃশ্যমান। সরকারি ফাইল, সফটওয়্যার, ডেটাবেইস—সবই এখন একজন দালালের ক্লিকের নিচে। তথ্যের নিরাপত্তা সেখানে অবান্তর, নিয়ম সেখানে অপাংক্তেয়। ভূমি অফিস, যা সাধারণ মানুষের জমি, অধিকার, ও অভিযোগের আশ্রয়স্থল হওয়ার কথা, এখন হয়ে উঠেছে এক ছদ্মবেশী বেসরকারি বাণিজ্যকেন্দ্র—যেখানে পদ-পদবির নেই কোনো মান্যতা, আছে শুধু পরিচয়ের জোর।

আর যে কর্মকর্তার হাতে থাকা উচিত ছিল আইনের ভারসাম্য, তাঁর আচরণ রীতিমতো গৃহস্থের লাঠিয়ালের মতো। একদিকে সরকারি চেয়ারে বসে বহিরাগতকে দায়িত্ব হস্তান্তর, অন্যদিকে সেই দায় তুলে ধরতে চাওয়া সাংবাদিককে শাসানো। প্রতিটি আচরণে ফুটে উঠছে দায়িত্ববোধের অনুপস্থিতি, এবং প্রশাসনিক অবস্থানকে ব্যক্তিগত ক্ষমতার আত্মসাৎ হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ‘আমি কিছু জানি না’ বক্তব্যটি হয়তো প্রশাসনের সবচেয়ে করুণ প্রতিচ্ছবি—যেখানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতা, অথবা সচেতন মৌনতা, দুটোই সমান বিপজ্জনক। ক্ষমতার স্তরে নীরবতা যখন নিয়মানুবর্তিতার জায়গা নেয়, তখন রাষ্ট্রপরিকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকে খড়কুটোর উপর।

উলিপুরের এই ভূমি অফিসকে আলাদা করে দেখার প্রয়োজন নেই। এটি আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতার প্রতীক। এটি সেই জায়গা, যেখানে রাষ্ট্রীয় পেশাদারিত্বের বস্ত্র খুলে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে, আর তার জায়গায় জুড়ে বসেছে দালালি, চাটুকারিতা, এবং প্রশাসনিক দায়িত্বের প্রহসন।

এখানে আরিফুল ইসলাম ব্যক্তি নন, তিনি এক পচনের প্রতীক। এক শৃঙ্খলা-শূন্য প্রশাসনিক পরিবেশ, যেখানে প্রশ্ন করলে প্রতিশোধ, যেখানে তদন্ত নয়, বরং তথ্য চেপে যাওয়াই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি। এই চিত্রে রাষ্ট্রের নামে কেবল একটি অফিসই অপমানিত হয়নি—সমগ্র প্রশাসনিক কাঠামোর চিত্রটাই হয়েছে ভ্রষ্ট।

এই লেখার উদ্দেশ্য কোনো তর্জনী উঁচানো নয়, বরং এক আয়নার সামনে দাঁড় করানো—যেখানে রাষ্ট্র দেখুক, তার কোন কোন অঙ্গ পচে গেছে, কোন কোন কোষে বাসা বেঁধেছে অনিয়ম, এবং কোন কোন চোখ আজও দেখেও দেখে না।

লেখক:
এম এইচ মুন্না
প্রধান সম্পাদক | দৈনিক গণতদন্ত, ঢাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট