উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
পদ মর্যাদায় একজন চুক্তি ভিত্তিক নাইটগার্ড কর্মচারী,অথচ এলাকাজুড়ে দাপট প্রথম শ্রেণির আমলার চেয়েও বেশি। অন্যের জমি দখল করা ভুল কাগজ দেখি রেকর্ড করে নেওয়া নৈশোপ্রহরী হয়ে দিনে অফিসে কাজ করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ উলিপুর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট আফিসে নিরাপত্তা কর্মী পদে কর্মরত আফজাল হোসেন ।
স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি সম্পত্তি রেকর্ড দখল, টাকা নিয়ে রেকর্ড বাণিজ্য, রাতে অফিসে অনুপস্থিতি সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন সব মিলিয়ে এই আফজাল গড়ে তুলেছেন এক ভয়ংকর প্রভাবের বলয়। অথচ সেটেলমেন্ট অফিসার, নিরব। উঠছে প্রশ্ন—একজন মাস্টাররোল এ নিয়োগ প্রাপ্ত নাইটগার্ড কর্মচারীর এতো দাপট কি শুধুই ব্যক্তিগত যোগ্যতা না কি এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক আশ্রয়?
অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিনের বেলায় উলিপুর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে গেলে বিভিন্ন লোককে টাকার বিনিময়ে সেবা দিচ্ছেন নৈশ্য প্রহরী আফজাল হোসেন। এবং সরকারি এলটা রুম দখলে নিয়ে সেখানের টেবিলে সরকারি বিভিন্ন কাগজপত্রে ভরপুর করে রেখেছেন। সাধারন জনগন সেবা নিতে আসলে তাদেরকে নিজের কাছে ডেকে সেবা দিতেও দেখতে পাওয়া যায় নৈশ্য প্রহরী আফজাল হোসেনকে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিযোগের বরাতে জানা যায়, আফজাল হোসেন এর বিরুদ্ধে গুরুতর অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে, যার অন্যতম সরকারি রেকর্ড পত্র নিজের কাছে রাখা মনমত টাকা নিয়ে খতিয়ানের অনুলিপি লিখে দেও। দলিল পত্র ছাড়া টাকার বিনিময়ে অফিসারের সঙ্গে যোগসাজোশে রেকর্ড বাণিজ্য করে।
লিখিত অভিযোগে মমিনুল, আনেছ সহ অনেকে জানান, আমাদের এস এ রেকর্ডও দলিলপত্র মূলে আমাদের জমি মাঠ রেকর্ড করি। অফিসের নাইট গার্ড ৩০ ধাবায় আমাদের উপর কেচ দেয়। কেসের শুনানীর সময় সে অফিসে প্রভাব খাটিয়ে এবং ৩০ ধাবার অফিসারকে হাত করিয়া আমাদের জমি রেকর্ড করিয়া নেয়। আমাদের নোটিশ গোপন করিয়া এবং প্রভাব দেখিয়ে জমি রেকর্ড করে নেয়। এ ব্যাপাবে আমরা অফিসের সহকারি সেটেলমেন্ট অফিসার ও পেশকারের কাছে গিয়েও কোন সুরহা পাই নাই। কারণ ওনারাও অন্যান্য অফিসারের মত নাইট গার্ডের প্রভাবের কাছে ভয়েভীত তাই আমরা জোনাল অফিস রংপুর এ ৪২ ধারায় নাইট গার্ড আফজাল হোসেনের উপর কেচ করি। আফজাল হোসেন ওখানে ও কাগজ পত্র না দেখিয়ে টালবাহানা শুরু করে। এবং বিভিন্ন লোক দিয়ে নাকি অফিসারকে ভয় দেখায়। সেসময় রংপুর এর অফিসার মোঃ খাদেমূল ইসলামকে সাংবাদিক মুন্নিসাহাকে দিয়ে ফোন করিয়েছিল বলে আমরা জানতে পারি। বিনা কাগজে এবং নোটিশ গ্রহন না করে আফজাল হোসেন ঐ সময়ের আওয়ামীলীগ পন্থী লোক এবং সাংবাদিক দিয়ে অফিসারকে ভয় দেখিয়ে জমি বহাল রাখার অনেক চেষ্ঠা করে। ঐ সময় জোনাল অফিসার এসব কারণে উক্ত কেচ কয়টি সমাপ্ত না করে অন্যখানে বদলী হয়ে চলে যান। পরবর্তীতে নতুন জোনাল স্যার এসে কেস কয়টির নোটিশ দিলে সে নোটিশ গ্রহন করে না। বরং অফিসার কে উল্টো নানা রকম খারাপ ভাষায় গালি গালাজ করে। অফিসের পিয়ন নোটিশ নিয়ে গেলে নোটিশ গ্রহণ না করে তাকেও গালি গালাজ করে। এতে জোনাল স্যার আফজালের উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং আমাদের কাগজপত্র দলিল পত্র দেখে আমাদেরকে রায় দেয়। সামান্য একজন নাইট গার্ড শুধু আমাদেরকে নয় বরং সে তার উপর অফিসারকে এভাবে ভয় দেখে আসছে বলে জানা যায়। শুধু তাই নয় বিভিন্ন মৌজার লোকদের কাছে ও টাকা নিয়ে জমি রেকর্ড সংশোধন করে দিবে বলে শোনা যায়। যেমন নারিকেল বাড়ি, ধরনিবাড়ি, উলিপুর, ধামশ্রেনী মৌজার কয়েক জনের কাছে টাকা নিয়েছে বলে শোনা যায়। এই সব লোক অফিসে থাকলে মানুষের ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার হবে না বলে আমরা মনে করি।তাই তাকে চাকুরী থেকে অপসারন করে ভূমি মালিক গণকে হয়রানি হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আবেদন করছি।
রাষ্ট্রীয় সকল নীতিমালা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উসমান আলী রেকর্ড করেছিলেন প্রায় ৩৫ শতক জমি। এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। জমিতে দখল না থাকলেও করেছিলেন অবৈধ রেকর্ড।
২০০৭ সালে মাস্টাররোলে চাকরি নিলেও ২০২৫ সালেও চাকরি স্থায়ী হয়নি-এ পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। এক সময় আওয়ামী লীগপন্থী বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সুযোগ বুঝে অফিসার দের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর সেই পরিচয় মুছে ফেলে ফের ঘনিষ্ঠতা বাড়ান বিএনপির দলের সঙ্গে। এভাবেই রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে চলছে আফজাল?
সেটেলমেন্ট অফিসে সেবা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, আফজাল কে দেখলে বুঝাই যায় না সে অফিসের নাইগার্ড একজন কর্মচারী? বিভিন্ন জায়গায় রেকর্ড সংশোধন ও রেকর্ড ধারায়দিবে বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। তার এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। অথচ এক সময় তাদের পারিবারিক অবস্থা ছিলো খুবই করুন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকলেও মাস শেষে হাজিরা নিয়মিত বেতন তোলেন আফজাল। তার বিরুদ্ধে রয়েছে রেকর্ড দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একাধিক অভিযোগ।
নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, আফজাল আমার কাছ থেকে রেকর্ড দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা নিয়েছে। কাজের কথা বল্লে আজ না কাল করে শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। অপর এক জন বলে আমাদের নাম বলেন না, তাহলে যদি পরে কাজ না করে দেয় তখন আমরা বিপদে পড়বো। টাকা কথা যান্তে চাইলে বলে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি আমার টাকা ফেরত চাইছি।তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, শহর ও বিভিন্ন জমি রেকর্ড নিয়ে নাকি ‘তদবির বাণিজ্য করেন সেটেলমেন্ট অফিসার দের সঙ্গে। এখন সে টাকার গরমে প্রভাবশালী রেকর্ড কর্মকর্তা।
আফজাল একজন নৈশ প্রহরী হলেও রাতের বেলা অফিসে উপস্থিত থাকেন না অথচ দিনের বেলা সারাদিন অফিসে থাকে। রাতে অফিসে থাকার কথা বল্লে বিভিন্ন অযুহাত দেখি বলে থাকতো। কিন্তু মাস শেষে ঠিকই হাজিরা ৩০ দিনের সই করে বেতন তুলে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফজাল হোসেন নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সব মিথ্যা। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে এসব ছড়াচ্ছে।”আর দিনের বেলায় অফিসে জনগনকে সেবা দেয়ার বিষয়ে বলেন, জনগন সেবা নিতে আসলে আমি সেবা দেই এতে সবাই খুশি হয়ে আমাকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বখশিশ দেয়। আমার কাজে সকলেই খুশি।
নৈশপ্রহরী আফজাল হোসেন বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পেশকার মারুফুজ্জামান বলেন আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি,, তাঁর সম্পর্কে কিছু জানি না।
এসব বিষয় উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার আমিনুল ইসলাম কে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সামগ্রিক বিষয়ে রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার নাজমুল হুদা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন নৈশ্য প্রহরী দিনের বেলা সরকারি নথিপত্র নিজের কাছে রাখা, জনগনকে সেবা দেয়ার বিষয়টি আইন বহির্ভূত এ ধরনের কাজ নৈশ্যপ্রহরী করতে পারে না। জনগনকে সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী আছেন। নৈশ্য প্রহরীর বিরুদ্ধে, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।