
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লার দেবিদ্বারের অন্যতম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দি রয়েল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় ঘটেছে নজিরবিহীন ফলাফল বিপর্যয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমন ভরাডুবি আর দেখা যায়নি— যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ বছর কলেজটির পাসের হার মাত্র ৫৩.৪ শতাংশ। অথচ ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৯৯.৩ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ছিল শতভাগ। এবারের পরীক্ষায় ২৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ১২২ জন, এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩ জন।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা বলছেন, এই ভয়াবহ ফলাফলের পেছনে অন্যতম কারণ কলেজের পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। জানা গেছে, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ তোফায়েল হায়দারকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট একদল শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা বিতর্কিতভাবে কলেজ থেকে বের করে দেন। এরপর থেকেই কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও মান দ্রুত নিম্নমুখী হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের দাবি, অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার কারণে শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, কলেজে বর্তমানে কিছু শিক্ষক নিজের বিষয় ব্যতীত অন্য বিষয় পড়াচ্ছেন, যা মানসম্মত শিক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাস বিভাগ থেকে পাশ করা সামিয়া আক্তার এখন বাংলা পড়ান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আব্দুল হালিম পড়ান ফিনান্স, ব্যাংকিং ও বীমা, আর বুয়েটের ছাত্র কাজী মহিউদ্দিন হাসান কেমিস্ট্রি পড়ালেও তার বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয় প্রাইভেট পড়ানোয়।
কলেজ থেকে বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক অভিযোগ করেন, “আমরা শুরু থেকেই কলেজে ছিলাম। কিন্তু বর্তমান কর্তৃপক্ষ ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাদের বের করে দেয়। কেমিস্ট্রি পড়ানো শিক্ষকটির যোগ্যতা নিয়েও শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছে।”
অন্যদিকে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজুল হাসান সরকার দাবি করেন, “আমরা দেবিদ্বারের মধ্যে তৃতীয় হয়েছি। এবার পরীক্ষার হলে কঠোর নজরদারি থাকায় আগের তুলনায় ফল কিছুটা কম হয়েছে।”
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, “আমি সদ্য দেবিদ্বারে যোগদান করেছি। এ কলেজের ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত এখনো জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্নে মুখর পুরো দেবিদ্বার। একসময় ভালো ফলাফলের জন্য পরিচিত দি রয়েল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ আজ পড়েছে সমালোচনার মুখে — আর অভিভাবকদের একটাই প্রশ্ন, “ফলাফলের এই পতন থেকে আবার কবে ঘুরে দাঁড়াবে আমাদের সন্তানের স্বপ্নের কলেজ?