স্টাফ রিপোর্টার:
নড়াইল সদরে এক ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনায় স্তম্ভিত পুরো জেলা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই স্কুলছাত্রের ওপর চালানো হয়েছে পৈশাচিক নির্যাতন। আহত আরিয়ান ইসলাম অভ্র (১৬) ও নিরব বিশ্বাস (১৩)-এর পরিবার বাব্বি সিয়াম (২৪) ও অজ্ঞাত আরও তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, অভ্র যশোর সদর উপজেলার নীলগঞ্জ এলাকার সৌরভ মাহমুদের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সে নড়াইল সদরের বেতবাড়িয়া এলাকায় নানাবাড়িতে থেকে গোবরা প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ছে। তার বন্ধু নিরব বিশ্বাস দক্ষিণ নড়াইল এলাকার সাধন বিশ্বাসের ছেলে ও স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, ২ অক্টোবর রাতে দুর্গাপূজার মেলা দেখে ফেরার পথে সীতারামপুর ব্রিজের কাছে তাদের পথরোধ করে হামলাকারীরা। প্রথমে গালাগাল, পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি প্রহার করা হয়। এসময় অভ্রর মাথায় ও বুকে গুরুতর আঘাত লাগে, আর নিরবের কলারবোন ভেঙে যায়। এরপর হামলাকারীরা তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এক পথচারী ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থার অবনতি হলে অভ্রকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। নিরব বাসায় চিকিৎসাধীন থাকলেও ভয়াবহ মানসিক আঘাতের মধ্যে রয়েছে।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ আছে, নির্যাতনের এক পর্যায়ে নিরবের প্যান্ট খুলে তার শরীরের পেছনের অংশ মোটরসাইকেলের গরম সাইলেন্সারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে নিরব গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়।
আহত নিরব কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,“আমরা দুই বন্ধু মুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম। পথে বৌবাজার এলাকায় এক মোটরসাইকেলের সঙ্গে সামান্য ধাক্কা লাগে। এরপর তারা আমাদের ধাওয়া করে ধরে ফেলে। তারপর আর কিছু মনে নেই, শুধু প্রচণ্ড যন্ত্রণা।”
অভ্রর নানী সুফিয়া বেগম ও নিরবের বাবা সাধন বিশ্বাস বলেন,“দুই কিশোরের ওপর এমন নির্যাতন কল্পনাতীত। আমরা চাই দোষীরা যেন আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি পায়, যাতে আর কোনো অভ্র বা নিরব এভাবে পুড়ে না যায়।”
অভিযুক্ত বাব্বি সিয়াম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“ওরা নেশাগ্রস্ত ছিল, দুর্ঘটনায় পড়ে যায়। আমি সাহায্য করতে গিয়েছিলাম। পরে ভুল বোঝাবুঝি হয়।”
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, ঘটনার সময় বাব্বি সিয়ামের সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারের জেল পুলিশ দুরন্ত বিশ্বাস জুধিষ্টি (৩০) ও নড়াইল সিটি কলেজের ছাত্র খন্দকার শায়খ আলী আবির (২১) উপস্থিত ছিলেন।
নড়াইল সদর থানার ওসি মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন,“ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি খুবই নৃশংস বলে মনে হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
নড়াইলের শান্ত শহরজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন—দুই কিশোরের এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়ার কারণ কী?আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তদন্ত শেষ হলে সব রহস্য উন্মোচিত হবে। কিন্তু অভ্রর পরিবারের অপেক্ষা এখন শুধু একটাই—ন্যায়বিচার।