এম এইচ মুন্না
প্রধান সম্পাদক, দৈনিক গণতদন্ত
সম্প্রতি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ইউএনও ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও আমাকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। পুরো ভিডিওটি দেখে আমি একটি অসহায় পরিস্থিতির চিত্র প্রত্যক্ষ করেছি—একজন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার চেয়ারে নিরুপায় বসে আছেন, আর বাইরে থেকে ২০-২৫ জন মানুষ 'ভুয়া ভুয়া' শ্লোগানে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কোনো কর্মকর্তা যদি প্রকৃতপক্ষে অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন এবং তা তদন্তের জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল, কিংবা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এভাবে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে, শ্লোগান দিয়ে, এবং সেই দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করাটা কি আমাদের নৈতিকতার কোনো জায়গায় দাঁড়ায়?
একজন নারী ইউএনও, যিনি একটি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন, তার বদলি আদেশ বাতিল বা সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অধীনে। কিন্তু তাকে এমনভাবে অসম্মান করে ভিডিও প্রকাশ করা আমাদের সমাজের শালীনতা এবং আইনি ব্যবস্থার প্রতি একধরনের উপহাস। এ ধরনের আচরণ প্রশাসনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা কমিয়ে দেয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আমরা কী ধরনের সমাজ গড়ে তুলছি, যেখানে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে এভাবে অসম্মান করতে দ্বিধা করা হয় না? ভিডিওতে আমি স্পষ্ট দেখেছি, তিনি কতটা অসহায় ছিলেন। একজন কর্মকর্তার সম্মান তার দায়িত্বপালনের সঙ্গে যুক্ত। তাকে এভাবে প্রকাশ্যে হেয় করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
আমাদের উচিত, কোনো অভিযোগ থাকলে তা সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা। এটি সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি। এ ধরনের ঘটনা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজকেই কলুষিত করে।
আসুন, আমরা ন্যায়পরায়ণতা, আইন এবং শালীনতার পথ অনুসরণ করি। কারও প্রতি অন্যায় বা অবিচার হোক, তা প্রতিরোধ করি। কিন্তু তা করার জন্য যেন আমরা আমাদের নিজেদের নৈতিকতা বিসর্জন না দিই।
[প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ লেখকের ব্যক্তিগত।]