স্টাফ রিপোর্টারস
নড়াইলের লোহাগড়ায় শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে ৩ মেয়েকে বিষ খাইয়ে, মাতা পলি বেগম নিজেও বিষ খেয়েছেন। বিষের যন্ত্রনায় চিৎকার করতে থাকলে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে গোপালগঞ্জের মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই দেড় বছরের ছোট মেয়ে মিমের মৃত্যু হয়। বাকি দুই মেয়ে- আড়াই বছরের আমেনা,আট বছরের আফসানা এবং মাতা পলি বেগম গোপালগঞ্জের মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের লঙ্কাচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পলি বেগম ওই গ্রামের টিটো মোল্যার স্ত্রী।
গোপালগঞ্জের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে গিয়ে দেখা যায়, পলি বেগমের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের মেজো মেয়ে আমেনাকে কোলে নিয়ে টিটো মোল্যা বসে আছেন। পাশের বেডে আট বছর বয়সের আফসানাকে কোলে নিয়ে অক্সিজেন মাস্ক ধরে বসে আছেন তার এক স্বজন।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে থাকা পলি বেগম জানান, আমি মারা গেলে আমার বাচ্চারা সকলের অযতœ, আর অবহেলায় বেঁচে থাকবে। তাই আমার সঙ্গে তাদেরও নিয়ে মরে যেতে চেয়েছি। এ দুনিয়া আমার কাছে এখন ভারী হয়ে উঠেছে। আমার মেয়েদেরও রাখতে চাই না। এত জ্বালাতন আর সহ্য করতে পারি না। আমার স্বামী বাড়িতে থাকেন না, ঢাকায় চাকরি করেন। আর মেয়েদের নিয়ে আমি গ্রামে থাকি। শাশুড়ি আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সব সময় নির্যাতন করতে থাকেন। স্বামীকে জানালেও তেমন কোনো প্রতিকার হয়নি। তিন দিন আগে পাশের বাজার থেকে জমিতে দেওয়ার কথা বলে বিষ কিনে ঘরে এনে রেখেছিলাম। মঙ্গলবার আমার শাশুড়ি আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। পরে সন্তানদের বিষ খাইয়ে, আমি নিজেও বিষ খেয়ে নেই।
পলি বেগমের স্বামী টিটো মোল্যা বলেন, আমি ঢাকাতে স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করি। স্ত্রী তিন মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। আমার মা প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন, স্ত্রী আমাকে তা ফোনে জানাতেন। মঙ্গলবার সকালেও তাকে বলেছেন মা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করছেন। আমি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে দুপুরেই রওনা হই। পথে এসে জানতে পারি, আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে সে নিজেও খেয়েছে। ছোট মেয়ে মারা গেছে। অন্য দুই মেয়ের কী হয় আল্লাহই জানেন। আল্লাহ যেন আমার দুই মেয়েকে ও স্ত্রীকে সুস্থ করে দেন।
গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাবিকুন নাহার বলেন, মঙ্গলবার রাতে মা ও তিন মেয়ে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ছোট মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। অন্য তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তবে নির্দিষ্ট সময় পার না করা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।