এন এ রবিউল হাসান লিটন পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে এনে দশম শ্রেণির এক কিশোরীকে গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি হাসান আলী (২২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকাগামী একটি নৈশ কোচে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা বলেন, এই মামলার প্রধান আসামি হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আলোচিত এ ঘটনায় পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে। বাকী ধর্ষকদেরও দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ্দ করা হবে।
এ নিয়ে এই মামলার এজাহারভুক্ত ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। ঘটনার পরদিন গ্রেপ্তার হওয়া রাজু এবং সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠায়।
উল্লেখ, গত ৬ আগস্ট গভীর রাতে জেলার আটোয়ারী উপজেলার পুরাতন আটোয়ারী এলাকার বন্দরপাড়া গ্রামের কাজী এন্ড কাজী নামের একটি চা বাগানে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাড়ি জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়। প্রায় ৪ দিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার পর নিজ বাড়িতে ফিরেন কিশোরী।
ধর্ষণের অভিযুক্তরা হলেন আটোয়ারী উপজেলার পুরাতন আটোয়ারীর মালগোবা গ্রামের মৃত আমিবার রহমানের ছেলে প্রেমিক হাসান (২৫), একই এলাকার ফতেহপুর গ্রামের খামির উদ্দিনের ছেলে মো. সবুজ (৩০), আব্দুল রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম ওরফে ডিপজল (২৫), খাজিম উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), কৈলাসর ছেলে অমর (৩০), একই এলাকার আব্দুর রহমান (৪০)।
জানা গেছে, মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক হয় কিশোরীর। ১ বছর ধরে ওই কিশোরীর মামার বাড়িতে যাওয়া-আসার সুবাদে প্রেমিক হাসানের সঙ্গে দেখা হতো। এক পর্যায়ে হাসানের সঙ্গে গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ওই কিশোরী। গত ৬ আগস্ট সকাল ১০টায় ওই কিশোরী বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। এর মধ্যে ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে ডেকে বিয়ে করবে বলে তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড়ে নিয়ে যায় প্রেমিক হাসান। বিকেলে পঞ্চগড় পৌঁছালে কাজী অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাত আটটার দিকে আটোয়ারী উপজেলার পুরাতন আটোয়ারী এলাকার বন্দরপাড়া গ্রামে সড়কের পাশে কাজী এন্ড কাজী চা বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে প্রেমিক হাসান ও তার বন্ধু সবুজ কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ধামোর ইউনিয়নের আরও কয়েক জন সেখানে উপস্থিত হলে হাসান ও সবুজ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কিশোরীকে একা পেয়ে তারাও ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে কিশোরীকে ফেলে তারা সবাই পালিয়ে যায়। ধর্ষক অমর সেখান থেকে বন্দরপাড়ার রাস্তার পাশে কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়। গভীর রাতে মান্নান নামে এক পথচারী কিশোরীকে অসুস্থ্য অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে বন্দরপাড়া গ্রামের নায়েব আলীর বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে কিশোরী নায়েব আলীকে সব ঘটনা খুলে বললে কিশোরীর খালুকে সংবাদ দেয়। তার খালু ভোর রাতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, এ ঘটনায় ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামিসহ মোট ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।