বুলবুল হাসান, পাবনা জেলা প্রতিনিধি : রাতের আঁধারে নিশ্বব্দে চুরি করে চোর এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি পাবনার বালু চোরাকারবারিদের ক্ষেএে। দিনভর সুনসান নিরবতা ; কিন্তু দিনের আলো ফুরিয়ে গেলেই শুরু হয় চোরাকারবারিদের প্রস্তুতি, আর রাতের অন্ধকার নামতেই শুরু হয় বালু (লোকাল) উত্তোলনের বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নয় বরং তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এভাবেই পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকার পদ্মানদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের এই মহোৎসব। এতে হতাশার পাশাপাশি বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। শত শত বিঘা ফসলি জমিও পড়ছে হুমকির মুখে। একটু দূরেই পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের বাড়ি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান- এই বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞের নেপথ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাবনা জেলা পরিষদের সদ্যনির্বাচিত সদস্য ও সংসদ সদস্যের ভাই ফররুখ কবির বাবু।
জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমোদন না থাকলেও উপরের সবগুলো মহলকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ কর্মযজ্ঞ। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে – উল্লেখিত ব্যাক্তিরা অত্যন্ত প্রভাশালী হওয়ায় নদীপাড়ারের বাসিন্দা ও নিরিহ কৃষকেরা ভয়ে মুখ খুলছেন না। দিনের বেলায় সেখানে কেউ না থাকলেও সন্ধ্যার পরপরই পাবনার সুজানগর সাতবাড়িয়া বাজারে চলে বালু উত্তোলনের সকল প্রস্তুতি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট-বড় প্রায় ৩০-৪০টি ট্রাক এনে সারিবদ্ধ করে রাখা হয় সাতবাড়িয়া বাজারের পাশে। এশার নামাজের পরপরই শুরু হয় বালু উত্তোলন। আশপাশের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে এই ট্রাকগুলো নির্ধারিত স্থানে বালু পৌছে দেয় বলে জানান- সাতবাড়িয়া বাজারের কিছু প্রত্যক্ষদর্শী।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক গনতদন্ত কে জানান- ‘দিনের বেলায় বোঝার উপায় নেই, এখানে বালু উত্তোলন হয় কিন্তু রাতে তারা খুব গোপনে এই কাজ করে। আমরা কিছু বলতে পারি না। অথচ যেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার সঙ্গেই আমাদের কিছু কৃষি জমি-জমা আছে। সেখানে আমরা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা চেষ্টা করলেও তাদের এইভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সেটি ভেঙে যাচ্ছে। তাতে আগামী বন্যায় এখানে নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যাক্তি।’
বিষয়টি প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন ফররুখ কবির বাবু। তিনি বলেন- এখানে কিছু গরিব মানুষ ড্রাম ট্রাক দিয়ে এইগুলো করে। রাতের বেলা তারা একটু টুকটাক (বালু) কাটে। তাও আবার গত সোমবার নিজেরা নিজেরাই ঝামেলা করে বন্ধ হয়ে আছে। কে আগে কাটবে কে পরে কাটবে- এটা নিয়ে নিজেরা নিজেরাই ঝামেলা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি ।
তবে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বালু উত্তোলনের পেছনে আমরা জড়িত নই, ওরা নিজেরা নিজেরাই কাটে, মাঝে আমাদের একটু বলে যে ভাই একটু দেইখেন, প্রশাসনকে একটু বলে দিয়েন আমাদের যেন ধরে-টরে না নিয়ে যায় এই আরকি! অন্য কিছু না। মানুষ তো মনে করে এরাই তো সব, এরাই সব করছে। কিন্তু আমরা বালু ব্যবসা করলে তো কোটি কোটি টাকার মানুষ হয়ে যেতাম। আমরা এইসব বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই বলে দায় এড়ান তিনি।’
এব্যাপারে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘সেখানে বালু উত্তোলনের কোনও অনুমোদন নেই। হয়তো সে (বাবু) এমপির ভাই, এই ক্ষমতা বলেই জোর করেই বালু তুলছেন। এছাড়াও আরও অনেকেই তার পেছনে আছেন। অবৈধভাবে বালু তুলছেন এটা সম্পূর্ণ সত্য।’
বিষয়টি স্বীকার করে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান দৈনিক গনতদন্ত কে বলেন- সাতবাড়িয়ার মাছের আরতের পেছন দিয়ে রাতে এটি চলছিল, আমাদের কাছে তথ্য ছিল। কিন্তু আমরা গত ২৮ নভেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওখানে গিয়ে ধরেছি এবং ভ্যাকুসহ কারেন্টের তার ছিড়ে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ করে এসেছি, আপাতত বন্ধ আছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে পাবনা-২
(সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন- আমি আজ সকালে শুনছি, আসলে ওখানে কিছু জমিতে জলাবদ্ধতা ছিল, সেই জলাবদ্ধতা দূর করতে একটি ক্যানাল কাটতে লাগছিল। কিন্তু নিজেরা নিজেরা মারামারি করায় ওসিকে বলে বিষয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।