রাজধানীতে ‘ডরি ডরি চিপস’ ব্যানারে দুই বাটপারের মহাপ্রতারণা!
স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজধানীতে দুই মহাপ্রতারকের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা কোরিয়ান চিপস এর নকল কারখানা খুলে ওই কোম্পানীর অনুকুলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে বাকিতে চিপস, চানাচুর, লাচ্চা সেমাইয়ের পলিপ্যাক,সিলিন্ডার ,তৈল,আটা,ময়দা,চিনি ও ডালডা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সেই টাকায় গাড়ি,বাড়ী ও নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন মোবাইল নম্বর ও অফিসের ঠিকানা বদল করে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাওনাদারদের টাকা আজ দেব ,কাল দেব বলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত লাপাত্তা হয়েগেছেন। তাদের প্রতারণার কৌশলের কাছে কমপক্ষে একডজন ব্যবসায়ী ধরাশায়ী হয়েছেন।
এদিকে এই দুই মহাপ্রতারকের প্রতারণার শিকার হয়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। তারা মামলা দায়ের করেও পাওনা টাকা আদায় করতে পারছেন না। অন্যদিকে কোম্পানীর নাম পাল্টিয়ে এই দুই প্রতারক তাদের প্রতারণা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে এই দুই বাটপারের নাম শাহেদুর রহমান ও মনির হোসেন। তারা আজ থেকে ৪ বছর আগে আমেনা’স ড্রীম,৯৭-বড়বাগ,(২য়তলা) মিরপুর-২,ঢাকা -১২১৬। এই ঠিকানায় ‘এনগ্রীণ ফুডস’ নামে একটি যৌথ মালিকানা কোম্পানী খুলে কোরিয়ান কোম্পানীর বিখ্যাত চিপস নকল করে ‘ডরি ডরি চিপস’ নামে ব্যবসা শুরু করেন। সাহেদুর রহমান এই কোম্পানীর চেয়ারম্যান ও মনির হোসেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর।
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তারা এই কোম্পানীর অনুকুলে পুরানা পল্টনের ডিজিটাল সলিউশনস ,ডিজিটাল এনগ্রেভার, মক্কা আলটিলেয়ার, খুলনা প্রিন্টসহ ঢাকা ফকিরেরপুলের বেশ কয়েকজন প্রেস ব্যবসায়ী ও টংগী এলাকার কয়েকজন আটা,ময়দা,তেল, চিনি ও ডালডা ব্যবসায়ীর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা মুল্যের পলিব্যাগ,কার্টুন, তেল,আটা,ময়দা,চিনি ও ডালডা সাপ্লায় নিয়ে ‘ডরি ডরি চিপস’ তৈরী করে বাজার জাত করেন।
কিছুদিন তার সৎভাবে লেনদেন করলেও অল্প কিছুদিন পরেই লেনদেন বন্ধ করে দেন। এক্ষেত্রে তারা কোম্পানী লস করেছে বলে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন মর্মে অজুহাত দেখান। একসময় তারা সমস্ত প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেন।
অনেক খোঁজাখুজির পর ডিজিটাল সলিউশনস এর প্রধান নির্বাহী মো: জিয়াউল হাসান পরাগ তাদের সন্ধান পেলে তারা পনের লক্ষ টাকার পাঁচটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু চেকগুলো ক্যাশ কালেকশনের জন্য ব্যাংক হিসাবে জমা দিলে ডিজঅনার হয়। দেখা যায় তাদের ব্যাংক হিসাবে কোন টাকা নেই।
এরপর পাওয়ানাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শত চেষ্টা করেও তাদের নাগাল না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল সলিউশনস এর এক্্িরকিউটিভ অফিসার তপন চন্দ্র সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পরপর তিনটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং সিআর ২৬৪/২০২০,সিআর ২৬৫/২০২০ ও সিআর ২৬৬/২০২০ ইং। এই মামলাগুলোতে আসামী সাহেদুর ও মনিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মহাবাটপার সাহেদুর ও মনির পুরানাপল্টন, নয়াপল্টন, ফকিরেরপুল ,পুরান ঢাকা ও টংগী এলাকার প্রায় একডজন ব্যবসায়ীির সাথে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সেই টাকায় নতুন মডেলের গাড়ী ক্রয় করেছেন। ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং সাভারে এগ্রোলী নামে একটি কারখানা (ফ্যাক্টরী) প্রতিষ্ঠা করে অন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাল নিয়ে ব্যবসা শুরু করছেন।
তাদের কৌশল হলো এক ব্যবসায়ী থেকে ২০/৩০ লাখ টাকার মাল বাকিতে নিয়ে সেই টাকা পরিশোধ না করে অন্য ব্যবসায়ীর সাথে নতুন করে ব্যবসা করা। এই কৌশলে তারা গত ৪ বছর ধরে প্রতারণা বাণিজ্য করে আসছেন।
এদিকে তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় এক ডজন ব্যবসায়ীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে আইন শৃংক্ষলা রক্ষাকারি বাহিনীর পদক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে এই দুই প্রতারক সম্পর্কে সকল ব্যবসায়ী মহলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দুই বাটপার সাহেদুর ও মনিরের মোবাইল ফোনে বারবার কল করলেও তারা কল রিসিভ করেননি।