বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের পোষাক সরবরাহ কাজের দরপত্রে অনিয়ম করে অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ক্রয় ও সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও বিআইডব্লিউটিএর কতিপয় চতুর্থ শ্রেণীর সিবিএ নেতাদের মোটা অংকের টাকা ঘুস দিয়ে এই অনিয়ম. দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে দাবী করেছেন একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
অন্যান্য বছরের মত এ বছরও ৫৫ লাখ টাকা বাজেটে এই দরপত্র আহবান করা হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রায় ১০/১২ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছেন। আগামী কাল ১৩ নভেম্বর ২০২৩ সোমবার দরপত্র খোলা হবে। কিন্তু অংশগ্রহনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা গোপনীয় মাধ্যমে জানতে পেরেছে যে, ঢাকা কমলাপুরের আল আমীন টেইলার্সের মালিক আবু সাইদ (ঠিকাদার) দরপত্র খোলা,বাছাই ও চুড়ান্ত মূল্যায়ণ হওয়ার আগেই তার বন্ধু মহলে প্রচার করেছেন যে,এবারও তার প্রতিষ্ঠানই উক্ত কাজের কার্যাদেশ পাচ্ছে। এজন্য নাকি গোপন চুক্তিতে তিনি পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম,দরপত্র মুল্যায়ণ কমিটির সভাপতি, অন্যান্য সদস্য এবং কতিপয় চতুর্থ শ্রেণীর সিবিএ নেতাকে ১১ লক্ষ টাকা ঘুস দিয়েছেন। ফলে তার দরপত্রই চুড়ান্ত হতে যাচ্ছে।
বিষয়টি এখন বিআইডব্লিউটিএ ভবনে আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য যে গত বছর প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে (ইজিপি) অংশ নিয়ে আল আমীন টেইলার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থার্ড লোয়েষ্ট হয়েও পরিচালক ও কতিপয় চতুর্থ শ্রেণীর সিবিএ নেতাদের বদৌলতে কার্যাদেশ পেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য যে, একই কায়দায় আল আমীন টেইলার্সের মালিক আবু সাইদ (ঠিকাদার) মোটা অংকের টাকা ঘুস দিয়ে বরাবার কাজ নিয়ে তিনি অতি নিন্মমানের পোষাক সরবরাহ করে আসছেন।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর বেশ কয়েকজন কর্মচারির সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বিগত বছরে তাদের যে পোষাক সরবরাহ করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্মমানের। এসব পোশাক পরিধান করে ডিউটি করতে খুবই কষ্ট হয়। এবং অল্প দিনেই রং জ¦লে যায় এবং কাপড় ছিঁড়ে যায়। অনেক কর্মচারি আজঅব্দি কোন পোষাকই পাননি। নামে মাত্র পোষাক সরবরাহ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত বছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ: অভিযোগ করেও তারা কোন প্রতিকার পাননি।
এ বিষয়ে আল আমীন টেইলার্সের মালিক ঠিকাদার আবু সাইদ বলেন, তিনি কেবল গত বছর (২০২২-২০২৩) একবার কার্যাদেশ পেয়েছেন। কাজ পেতে কাউকে কোন কোন ঘুস দেন নি। এ বছরও তিনি দরপত্রে অংশ গ্রহন করেছেন।
জানতে চাইলে সিবিএ নেতা মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন,এটি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের বিষয়। সিবিএ নেতাদের হস্তক্ষেপের কোন সুয়োগ নেই। তাছাড়া ওই ঠিকাদারকে আমরা চিনিও না।
ক্রয় ও সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারী বিধি বিধান মোতাবেক প্রতিযোগিতামুলক দরপত্র (ইজিপি) আহবানের মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে ঠিকাদার নির্বাচন এই কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এজন্য একটি দরপত্র মুল্যায়ণ কমিটিও রয়েছে। অতএব এখানে অনিয়ম দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। একই প্রতিষ্ঠান বারবার কিভাবে কাজ পাচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি যদি যোগ্যতার মানদন্ডে উত্তির্ণ হন তবেই কাজ পাবেন অন্যথায় নয়। দরপত্র খোলার আগেই ঠিকাদারের কাছ থেকে ১১ লক্ষ টাকা ঘুস নেওয়ার বিষয়টিকে তিনি কাল্পনিক অভিযোগ বলে মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য যে বিআইডব্লিটিএর ক্রয় ও সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
দরপত্রে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদাররা এ ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএর বিচক্ষণ চেয়ারম্যানের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করেছেন।