1. info@dainikgonatadanta.com : দৈনিক গণতদন্ত :
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন
বিজ্ঞাপন:
জরুরী নিয়োগ চলছে, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, ক্যাম্পাস ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি বা সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

বিবেক হারানো জাতির প্রান্তসীমায় ড. ইউনূস

রিপোর্টারের নাম :
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

 

একটি জাতির ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যেগুলো সময়ের গহ্বরে নেমে গিয়ে শুধু স্মৃতি হয় না—পরিণত হয় বিবেকের মানদণ্ডে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের রাজনীতি ও প্রশাসনিক যাত্রায় এমনই এক অনন্য মুহূর্ত ছিল যখন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, মানবতাবাদী ও দার্শনিক দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার আসনে আসীন হন।

সেই দায়িত্বগ্রহণ কেবল প্রটোকলভিত্তিক প্রশাসনিক পরিবর্তন ছিল না; বরং তা ছিল এক আদর্শিক বিদ্রোহ—এক ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রনৈতিক কাঠামোকে নৈতিকতায় শুদ্ধ করে তোলার সর্বাত্মক প্রয়াস। ড. ইউনূস চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে নতুন এক অর্থনৈতিক-মানবিক দর্শনে গড়ে তুলতে, যেখানে দুর্নীতি নয়, ন্যায্যতা কথা বলে; যেখানে আমলাতান্ত্রিক জড়তা নয়, দক্ষতা পথ দেখায়; এবং যেখানে রাষ্ট্রীয় নির্লজ্জ সুবিধাভোগ নয়, জনসাধারণের কল্যাণই হয়ে ওঠে প্রশাসনের মূল এজেন্ডা।

কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের রাষ্ট্রে এক শ্রেণির অদৃশ্য ‘অসৎ সুবিধাভোগী’ শক্তি গভীরভাবে প্রোথিত, যারা যে কোনো সত্যিকারের পরিবর্তনের বিপরীতে এক ভয়াবহ প্রতিরোধ নির্মাণে পারদর্শী। সেই শ্রেণির কুশলী ষড়যন্ত্র আজ এমনভাবে সক্রিয় হয়েছে যে, ড. ইউনূসকেই আজ অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এক নির্মম বিদ্রূপ—যেখানে সততা, দক্ষতা ও মানবিকতা একত্রে থাকলেই তা হয়ে ওঠে ‘অপরাধ’।

বিশ্বজুড়ে যখন ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা মডেল দারিদ্র্য বিমোচনের নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও আফ্রিকান ইউনিয়ন তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ—তখন নিজের মাতৃভূমিতে তিনি শুনছেন অপবাদ, ষড়যন্ত্র আর হীনমন্যতার ধ্বনি। তাঁর নোবেল বিজয়, জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে অংশগ্রহণ, কিংবা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মান—সবকিছু যেন আজ এখানে মূল্যহীন। কারণ সত্য বলা এবং সততা নিয়ে টিকে থাকা এখানে ‘ক্ষমাহীন অপরাধ’।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিছক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, তা জাতিগত আত্মসমালোচনার দর্পণে এক চূড়ান্ত প্রতিবিম্ব। একটি রাষ্ট্র যখন তার সবচেয়ে বিবেকবান সন্তানের জন্য জায়গা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই সন্তানের প্রস্থান হয়ে ওঠে সম্মানের—কিন্তু জাতির জন্য রয়ে যায় অপূরণীয় ক্ষতি।

তবু ইতিহাসের নীরব পাঠকরা জানে, এই অল্প সময়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে তাঁর নেতৃত্বে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বাস্তবায়িত হয়েছিল, যেগুলো এখন রাষ্ট্রযন্ত্রে বিরল উদাহরণ হয়ে রয়ে গেছে:

দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ: বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান, বহুদিনের অদৃশ্য দুর্বৃত্তায়নের মুখোশ উন্মোচন করে।

বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দীর্ঘমেয়াদি করছাড়, সহজ নিয়মাবলী ও দ্রুত প্রশাসনিক সেবা চালু হয়, যার ফলে দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও জার্মানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

তথ্যপ্রযুক্তি ও তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়ন: জাতীয় পর্যায়ে ‘ইনোভেশন কাউন্সিল’ গঠন, স্টার্টআপ ফান্ড চালু এবং ‘এক জানালা সেবা’ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে।

নারীর ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে ‘মাইক্রো সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ’ প্রোগ্রাম চালু করে গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী করার পথ সুগম করা হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভাবমূর্তি: জাতিসংঘ, ওআইসি ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে নেতৃত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠিত হয়। ড. ইউনূস হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের একজন ‘গ্লোবাল রেপ্রেজেন্টেটিভ’।

এ সবকিছুই প্রমাণ করে—যদি সদিচ্ছা ও দূরদৃষ্টি থাকে, তবে অল্প সময়েই এক জাতির আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

আজ তাই প্রশ্ন শুধু এই নয়—ড. ইউনূস থাকবেন কিনা। প্রশ্ন হলো—আমরা তাঁকে ধারণ করার মতো মানসিকতা গড়ে তুলতে পেরেছি কি? নাকি এখনো আমরা সেই পুরনো, বিভ্রান্ত, সুবিধাবাদী চক্রের ক্রীড়নক হয়ে নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎকে গিলে ফেলছি?

আমরা চাই, আপনি থাকুন, ড. ইউনূস। আপনি থাকুন, যতদিন না এই রাষ্ট্র তার বিবেক ও নৈতিকতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কারণ আপনি হারিয়ে গেলে, কেবল একজন মানুষ নয়—হারায় এক আদর্শ, এক নৈতিক মানদণ্ড। আর তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

——-
লেখক:
এম এইচ মুন্না, প্রধান সম্পাদক | দৈনিক গণতদন্ত

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট