উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত “মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি” প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। হতদরিদ্র পরিবারের জন্য বিনামূল্যে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণের নামে নিম্নমানের কাজ, দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখা, ঠিকাদার নিয়োগে অস্বচ্ছতা ও কোটি টাকার প্রকল্প অর্থ লোপাটের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ২ হাজার ৯৭৭টি টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি ল্যাট্রিনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৬৬০ টাকা। সেই হিসেবে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৯ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮২০ টাকা।
তবে এত বিপুল অর্থের প্রকল্পে কাজের মান ও স্বচ্ছতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, টাকার অঙ্কে প্রকল্প বড় হলেও বাস্তবে কাজের মানে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই ১০ হাজার টাকারও কম ব্যয়ে ল্যাট্রিন নির্মাণ সম্পন্ন করা হচ্ছে, ফলে কোটি টাকার সরকারি অর্থ লোপাট হচ্ছে বলে তাদের দাবি।
সরেজমিনে উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের ইন্দারার পাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সুবিধাভোগী আহাদ আলীর বাড়িতে নির্মিত ল্যাট্রিনের সিঁড়ি ভাঙা, দেয়াল ফাটলধরা, দরজায় নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি কাজও অসম্পূর্ণ রেখে চলে গেছে শ্রমিকরা। আহাদ আলী বলেন, “ওনাদের শ্রমিকের বদলে আমার কাছ থেকেই গর্ত খোঁড়ার কাজ করানো হয়। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে তাড়াহুড়ো করে চলে গেছে।”
শুধু ওই এলাকা নয়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। নির্মাণাধীন ল্যাট্রিনগুলোতে নিম্নমানের রিং-স্ল্যাব, কাঠ ও টিন ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কাজ শুরু করে মাসের পর মাস ফেলে রাখায় উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে। হস্তান্তরের আগেই বহু ল্যাট্রিন অকেজো হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা জানান, কাজের দায়িত্ব পাওয়া কিছু ঠিকাদার কেবল নামমাত্র কাজ করছে। তারা বরাদ্দের বড় অংশ তুলে নিচ্ছে কিন্তু মাঠে বাস্তবায়ন করছে অল্প অংশ। ফলে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য—হতদরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
এসব নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েকজন ঠিকাদারকে। তবে কারা এ কাজ পেয়েছেন বা কোন ঠিকাদার কোন এলাকায় কাজ করছেন—সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কে কোন ঠিকাদার কাজ করছে, সে তালিকা আমার কাছে নেই।”
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, “হতদরিদ্রদের জন্য দেওয়া এসব ল্যাট্রিনের কাজে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। সব কাজ নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে।”