
(পর্ব–০১)
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ী এবং পাশের মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। দিনের বেলা যেমন, সন্ধ্যা নামলেই এই সব এলাকায় শুরু হয় অবাধ মাদক বাণিজ্য। সাধারণ মানুষের চোখের সামনেই নীরবে, নিয়মিতভাবে চলতে থাকা এই নেশা–বাণিজ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে পুরো জনপদ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ।
এলাকাবাসীর দাবি—এই বিপজ্জনক মাদক নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কুখ্যাত মাদক সম্রাট সালাউদ্দিন। ইয়াবা বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে স্কুল–ছুট কিশোর, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী তরুণদের। তার কারণেই এলাকায় বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা এবং বিভিন্ন অপরাধের মাত্রা। একসময় যার পরিবারে শান্তি ছিল, এখন সেখানে অস্থিরতা আর কান্না ছাড়া কিছুই নেই।
স্থানীয় মানুষেরা জানান, সালাউদ্দিনের নাম অজানা কারও নেই। কিন্তু তার দৌরাত্ম্য এমনই ভয়াবহ যে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস করে না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে হুমকি–ধামকির শিকার হয়েছেন, আবার কারও পরিবারে নেমে এসেছে বিপদ। এক প্রবীণ বাসিন্দার বেদনা–ভরা স্বীকারোক্তি—“আমরা জানি কে আমাদের এলাকা ধ্বংস করছে। কিন্তু মুখ খুললেই বিপদ। সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে রক্ষা নেই।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে— সালাউদ্দিনকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হলেও প্রতিবারই জামিনে বেরিয়ে আরও ভয়ংকর হয়ে ফিরে এসেছে সে। পুলিশের নজরদারি থাকলেও অভিযানের আগেই গা–ঢাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কৌশল তার চক্র খুব ভালোভাবেই জানে। পুলিশের দাবি— তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু গ্রামবাসীর প্রশ্ন—“কবে?”
অনেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন— সত্যিই কি সে কখনও আইনের আওতায় আসবে?
তদন্তে আরও উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য— সালাউদ্দিনের পেছনে রয়েছে কয়েকজন প্রভাবশালী এবং অসাধু কর্মকর্তা। তারা তাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সুবিধা নেন, আর বিনিময়ে তাকে রক্ষা করেন। ফলে বছরের পর বছর দুর্নীতি ও ক্ষমতার ছত্রছায়ায় সে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
এদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ। ইয়াবার নেশায় পড়া কিশোর–যুবকেরা শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কর্মহীন হয়ে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। পরিবার ভাঙছে, সমাজের মূল্যবোধ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এক অসহায় অভিভাবকের কান্নাজড়ানো কণ্ঠ—“শিশুকে স্কুলে পাঠাই, কিন্তু বিকেলে কখন যে ভুল পথে চলে যাই—বুঝতে পারি না। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় আছি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন— শুধু পুলিশি অভিযানেই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দরকার সামাজিক প্রতিরোধ, সচেতনতা ও তরুণদের পুনর্বাসন। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে খুব শিগগিরই একটি পুরো প্রজন্ম নেশার বিষে ডুবে যাবে।
বর্তমানে ভিংলাবাড়ী ও কোম্পানীগঞ্জের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে—“কবে মুক্তি মিলবে এই মাদক আতঙ্ক থেকে?”
তাদের একটাই দাবি— মাদক সম্রাট সালাউদ্দিনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।
এখন সবার চোখ প্রশাসনের দিকে।
আর কত তরুণের জীবন ধ্বংস হলে বন্ধ হবে এই নেশার ভয়ংকর সাম্রাজ্য?
আরো বিস্তারিত থাকছে দ্বিতীয় পর্বে, সালাউদ্দিনকে কেন্দ্র করে প্রথম পর্বে উঠে এসেছে বহু বিস্ফোরক অভিযোগ ও তথ্য। কিন্তু এই অন্ধকার অধ্যায় এখানেই শেষ নয়। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে— শুধু সালাউদ্দিন নন, তার পাশাপাশি আরও কয়েকজন কুখ্যাত ও প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী বহুদিন ধরে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষের ফাঁদ।
দ্বিতীয় পর্বে আমরা তুলে ধরব—
কারা এই গোপন চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে,
কোথা থেকে আসে তাদের অর্থ ও ক্ষমতা,
আর কীভাবে তারা বছরের পর বছর আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাঁচছে। কে তাদেরকে মাদক সাপ্লাই দেয়।
অপেক্ষায় থাকুন…
উন্মোচিত হবে আরও ভয়ংকর মাদক সাম্রাজ্যের লুকানো মুখোশ।