স্টাফ রিপোর্টার:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় নববধূ জান্নাতি খানম অন্তুর (২২) মরদেহ উদ্ধারকে ঘিরে এলাকায় নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চর-শালনগর গ্রাম থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের গলায় ছিল স্পষ্ট দাগ— যা পরিবারের কাছে এটি নিছক মৃত্যু নয়, এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ তৈরি করেছে।
নিহত জান্নাতি খানম অন্তু শালনগর ইউনিয়নের চর-শালনগর গ্রামের সাজ্জাদ মোল্যা (৩২)-এর স্ত্রী এবং রঘুনাথপুর গ্রামের মিটুল মোল্যার মেয়ে। চার মাস আগে সাজ্জাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে সাজ্জাদের আগের একটি বিয়ে ছিল, যা বিচ্ছেদের পরও পরিবারের পক্ষ থেকে গোপন রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবারের দাবি—বিয়ের পর থেকেই অন্তুকে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছিল। দুর্গাপূজার ছুটিতে অন্তু বাবার বাড়ি আসলে কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু সোমবার দুপুরে স্বামী সাজ্জাদ ও তার পরিবার হঠাৎ তাকে অটোভ্যানে করে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরই সাজ্জাদের ছোট ভাই ফোনে অন্তুর ভাই সাব্বিরকে জানায়, “অন্তু স্ট্রোক করেছে, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসেন।”
পরে অন্তুর বাবা লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মেয়েকে না পেয়ে ছুটে যান জামাই সাজ্জাদের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখেন, একটি ভ্যানের উপর নিথর পড়ে আছে মেয়ের দেহ— গলায় দাগ, চোখে অস্বাভাবিক ফোলা ভাব। ঘটনাস্থলে তখন সাজ্জাদ বা তার পরিবারের কেউ ছিল না। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নিহতের স্বজনদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে জান্নাতি খানম অন্তুকে। তারা দ্রুত সাজ্জাদ মোল্যা ও তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, “মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
গ্রামের সাধারণ মানুষের দাবি—এ মৃত্যু রহস্যজনক। দিনদুপুরে একজন নববধূর প্রাণ চলে গেলেও শশুরবাড়ির সবাই নিখোঁজ—এটি স্বাভাবিক নয়। তাই এলাকাজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন—“অন্তুকে কে হত্যা করলো, কেন?”