হোসাইন মাহমুদ
মাদারীপুরে চোর সন্দেহে আল-আমিন হাওলাদার (২৪) নামে এক যুবককে রাতে ঘর থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে অকথ্য নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্য এবং তার লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন।
রবিবার (৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলা ঝাউদি ইউনিয়নের পূর্ব মাদ্রা এলাকার একটি জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা মিলে আল-আমিনকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
বুধবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেড শোয়া আল-আমিনের সারা শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন। গাছে বেঁধে তার চোখে ও পুরুষাঙ্গে আঘাত করা হয়েছে। লোহার রড দিয়ে পেটানোয় শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমে গেছে।
সদর উপজেলার ঝাউদি ইউপি ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য হাফিজুর রহমান মিন্টু (৪৫) এবং তার অনুসারীরা তার ওপর এ হামলা করেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী আল-আমিন ঝাউদি ইউনিয়নের মাদ্রা গ্রামের আলমগীর হাওলাদারের ছেলে।
এ ঘটনায় মামলায় আসামিরা হলেন– ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান মিন্টু, সিরাজুল হাওলাদার (৪০), আক্তার হাওলাদার (৩৮), মাদ্রা এলাকার কেরামত হাওলাদার (৫০), ফরিদ হাওলাদার (৩০)।
ভুক্তভোগী আল-আমিন বলেন, ‘গত ৭ জুলাই ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান মিন্টুর দোকানে চুরি হয়। কে বা কারা চুরি করেছে আমি জানি না। আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। দিন আনি দিন খাই। রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দোকানের টাকা চুরি হওয়ায় চোর সন্দেহে ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন এসে কোনও কিছু না বলেই আমাকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। আমি বারবার বলেছি, আমি চুরি করিনি, কিন্তু কেউ শোনেনি। যাতে শব্দ না করতে পারি সেজন্য মুখের ভেতর কাপড় ঢুকিয়ে হাত-পা বেঁধে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। তারা আমার পুরো শরীরে আঘাত করেছে। আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। পরে স্বজন ও স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।’
হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি। বাঁচবো কিনা জানি না। মেম্বার এবং তার অনুসারীদের বিচার চাই।’
আল-আমিনের মামা ইমরান দেওয়ান বলেন, ‘চোর সন্দেহে রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আল-আমিনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে। সে কোনও অন্যায় করলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবাই মিলে আমার ভাগ্নেকে নির্যাতন করছে। এখন সে বাঁচার মতো না। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে ওকে আমরা লালন-পালন করেছি।’
আল-আমিনের আরেক মামা নাসিম দেওয়ান বলেন, ‘সকালে হাসপাতাল থেকে ফোনে জানিয়েছে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিতে হবে। সে বেঁচে ফিরবে কিনা জানি না। তার মাথা থেকে পায়ের গোড়া পর্যন্ত পিটিয়েছে তারা। এমন অমানবিক কাজ কেউ করতে পারে না। সে যদি চোরও হয় তাকে মারার অধিকার কারও নেই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আল-আমিন বিভিন্ন বাড়িতে সব সময় চুরি করতো। এমন কোনও বাড়ি নেই যেখানে সে চুরি করেনি। তাকে উত্তেজিত লোকজন পিটিয়েছে। আমি মেম্বার মানুষ, আমি কেন তাকে মারতে যাবো। তাকে স্থানীয় লোকজনরা মেরেছে। আমার কিছু করার ছিল না।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’