হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দিউড়া উম্মেতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ফখরুজ্জামানের নায়েমে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিষয় ও ইনডেক্স নম্বর ভুয়া বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে হবিগঞ্জ জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একটি মনোনয়ন চিঠিতে আান্দিউড়া উম্মেতুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের সহকারি শিক্ষক ফখরুজ্জামানের নামের পাশে বিষয় আইসিটি ও ইনডেক্স নম্বর N 1141152 লিখে সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালকের নিকট প্রেরণ করে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল্লাহ স্বাক্ষরিত এই চিঠির বিষয় এবং ইনডেক্স নাম্বার অধিদপ্তরের সফটওয়্যারে ভেরিফাই করলে দেখা যায় নামের পাশে ব্যবহৃত ইনডেক্স নম্বর N1141152 এবং বিষয় আইসিটি ফখরুজ্জামানের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। ইহা সম্পূর্ণ ভুয়া।
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে অন্য একটি চিঠিতে বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা ফখরুজ্জামানের নামের পাশে বিষয় আইসিটি ও ইনডেক্স নাম্বার N1141152 লিখে নায়েমে প্রেরণ করে। প্রেরিত এ চিঠির আলোকেই ফখরুজ্জামান ভুয়া ইনডেক্স N1141152 ও বিষয় আইসিটি ব্যবহার করে নায়েম থেকে সরকারি প্রশিক্ষণ এবং সরকারি অর্থ গ্রহণ করে।
এ বিষয়টি জানাজানির পর বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক শামসুজ্জামান জুয়েল প্রধান শিক্ষক বরাবর ফখরুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করে। যেখানে বলা হয় আইসিটির নির্ধারিত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ভুয়া ইনডেক্স ও বিষয় ব্যবহার করে কিভাবে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ফখরুজ্জামান এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে ? প্রধান শিক্ষক তার আবেদনপত্রটি গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানায়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রেরিত চিঠি ২টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কোন ধরনের নিয়ম না মেনেই ফখরুজ্জামানের নামের পাশে বিষয় আইসিটি এবং ইনডেক্স নম্বর N1141152 লিখে নায়েমে প্রেরণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মনোনয়ন চিঠি পাঠাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ মনোনয়ন ফরওয়ার্ডিং করবেন বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট।আর বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা তা প্রেরণ করবে নায়েমে। কিন্তু এখানে দেখা যায় প্রধান শিক্ষককে বাদ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে ফখরুজ্জামান অন্যায়ভাবে তার নিজের নামের পাশে বিষয় আইসিটি ও ইনডেক্স নাম্বার N1141152 ব্যবহার করে আইসিটি অন এডুকেশন নামে নায়েমে একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করে।
শুধু এটিই নয়, যেকোনো প্রশিক্ষণ আসলে সকলের আগে এ ফখরুজ্জামান বিভিন্ন কায়দা ফন্দি করে সকলের আগে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিট আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে মাস্টার ট্রেইনার বিষয়ে একটি প্রশিক্ষণে ফখরুজ্জামান লালমাঠিয়া স্কুলে অংশগ্রহণ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন "তার এই ভুয়া ইনডেক্স নাম্বার ও বিষয় ব্যবহার করার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। কিন্তু আমাকে না বলেই সে তার ক্ষমতা দেখিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে এ অন্যায় কাজটি করেছে। "
তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন " চিঠিতে উল্লেখিত বিষয় এবং ইনডেক্স নম্বরটি ভুয়া। ফখরুজ্জামান যেভাবে লিখে দিয়েছে আমি ঠিক সেভাবেই লিখে দিয়েছি। এতকিছু যাচাই করার সময় আমার ছিলনা। তাই এ দায়ভার ফখরুজ্জামানকেই বহন করতে হবে। "
বর্তমান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদা নাজনিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন "বিষয়টি আমি দেখেছি এবং জেনেছি । ইনডেক্স নাম্বার ভুয়া ব্যবহার করা একটি অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। "
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুজ্জামান বলে "আমি বাংলা বিষয়ের সহকারি শিক্ষক। আমার একটি আসল ইনডেক্স নাম্বার আছে।" কিন্তু এই ভুয়া ইনডেক্স নাম্বার ও বিষয়ের ব্যাপারে কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।
বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হয়েও ভুয়া ইনডেক্স নাম্বার নিয়ে নায়েম থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ক্ষমতার দাপটে সে এখন হবিগঞ্জ জেলার আইসিটির জেলা অ্যাম্বাসেডর। জেলায় শত শত আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও এই ফখরুজ্জামান কিভাবে আইসিটির জেলা এম্বাসেডর? -তা এখন জনমনে প্রশ্ন।