পর্ব-০১
এম এইচ মুন্না: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা। সরকার যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প নিচ্ছে, সেখানে উপজেলা মৎস্য দপ্তর রূপ নিয়েছে দুর্নীতির 'পারসোনাল প্রজেক্টে'। অফিসের মালিক যেন এখন জনগণ নয়—একক ক্ষমতায় চলে এটি এক কর্মকর্তার ইচ্ছাধীন প্রতিষ্ঠানে। তিনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মী আখতার।
সরেজমিনে অনুসন্ধান ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এই কর্মকর্তা দায়িত্বে আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় গড়েছে। কাজের চেয়ে অনুপস্থিতি বেশি, মাঠের চেয়ে ফাইলের পাতায় ব্যস্ততা, আর ‘গণসেবা’র চেয়ে ‘ব্যক্তিসেবা’র প্রতি তার অনুরাগ প্রবল।
স্থানীয়দের ভাষায়—“এই অফিসে অফিসার আছে শুনেছি, দেখি নাই!” সপ্তাহে দুই–তিন দিন ফরমাল হাজিরা, বাকিটা সময় 'মিটিং', 'ট্রেনিং', 'পরিদর্শন'—সব কিছুর নামে হাওয়ায় বিলীন। অথচ সরকারী হাজিরা খাতায় সব ঠিকঠাক, ফিল্ড রিপোর্টে তৎপরতা পূর্ণ! একে বলে ‘ডিজিটাল গায়েবি চাকরি’!
শুধু অনুপস্থিতি নয়, অফিসটি পরিণত হয়েছে ‘টাকায় নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমে’। উপজেলার হাটবাজারে প্রতিনিয়ত অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি হচ্ছে দিব্যি, অথচ মৎস্য কর্মকর্তার চোখে পড়ছে না কিছুই! তিনি কেন নীরব? স্থানীয়দের দাবি—"তিনিও খেলায় আছেন!" অভিযান হয় না, হয় ‘আলোচনা’। জরিমানা নয়, চলে চুক্তি ও মাসোহারা। অফিস নয়, যেন ঘুষের হাট বসেছে।
আরও ভয়ংকর অভিযোগ—সরকারি পোনা বিতরণ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণের টাকা—সব চলে নির্দিষ্ট চক্রের হাতে। চাষীরা বঞ্চিত, অথচ পেপারে পেপারে রিপোর্ট—‘সফল বাস্তবায়ন’। নামে প্রশিক্ষণ, আদতে ভুয়া তালিকা আর ভাগ-বাটোয়ারা।
প্রায় দুই বছর ধরে অধিকাংশ স্থানীয় চাষীরা মৎস্য কর্মকর্তার নামই শোনেননি! অনেকেই বলেন, “এই নামে অফিসার আছে, সেটাও এখন জানলাম।” যেন এক ‘ভৌতিক কর্মকর্তা’—অবস্থান কাগজে, বাস্তবতায় নেই!
তাকে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অনুপলব্ধ। সরকারি পদে থেকে এমন নীরবতা শুধু অবজ্ঞা নয়—অপরাধের চিহ্ন!
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“এই অভিযোগ ভয়ংকর। তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কর্মকর্তা যদি জনগণের ক্ষতির কারণ হন, তাহলে তিনি আর সরকারের অংশ হতে পারেন না।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের টাকায় যারা মাস শেষে বেতন তোলেন, তাদের দায়বদ্ধতা থাকতেই হবে। জনগণের ক্ষতি করে কেউ পার পাবে না।”
এই বক্তব্যেই স্পষ্ট—বিষয়টি এখন শুধু স্থানীয় প্রশাসনের গণ্ডিতে নেই, পৌঁছে গেছে ঢাকার কেন্দ্রীয় মহলে। প্রশ্ন একটাই—সরকার কবে নেবে পদক্ষেপ? আর সাধারণ মানুষ কবে পাবে মুক্তি এই ‘পেছনের দরজার দুর্নীতিবাজ অফিসার’দের হাত থেকে?
[চলবে…]