রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার
২৪ শে জুন ২০২৫ ইং মঙ্গলবার
রংপুর পৌরসভায় বরখাস্ত হওয়ার ১৪ বছর পরে সু-কৌশলে পুনরায় ২০১৮ সালে এসে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে (রসিক) চাকরিতে যোগদানের পরেই কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্ত। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্ত ছিলেন চতুর্থ গ্রেট এর কর্মচারী। ৬ বছরে পেয়েছেন ৩ পদোন্নতি। জানা যায়, তৎকালীন পৌরসভার অর্থ লেনদেনসহ টাকা আত্মসাৎ এর দায়ে ১৪ বছর বরখাস্ত ছিলেন এই সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্ত। চাকরির প্রথমদিকে বস্তি শাখায় যোগদান করেন তিনি। ঘুষ লেনদেন আর টাকা আত্মসাৎ এর দায়ে চাকরি হারানোর পরে চলে যান অন্য পেশায়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির মনোনিত মেয়র এলে সু-কৌশলে পুনরায় ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই শুরু হয় পদোন্নতি ও নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেকের টাকা। আর এতে করে বনে যান অঢেল সম্পদ ও বাড়ী-গাড়ীর মালিক।
এতেই শেষ হয়নি, সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্ত ক্ষমতার জোরে ছয় বছরে নিয়ে তিন পদোন্নতি নিয়ে দাপটের সাথে করছেন চাকরি। এর আগে উচ্চমান সহকারী থেকে প্রধান সরকারি আবার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করেন। কিভাবে রাতারাতি পদ বদলানো যায় কৌতূহল সবার মনে। সরকারি নীতিমালায় আছে, একটি করে পদে উন্নতি করতে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। যেখানে ছয় বছরেই তিন পদোন্নতি। শান্ত বিগত আওয়ামী লীগের সময় অনেক দাপোটের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। লাইসেন্স শাখার সহকারী আব্দুস সামাদের মেয়েকে সিটি কর্পোরেশনের জন্মনিবন্ধন শাখায় চাকরী দেওয়ার কথা বলে গত দুই বছর আগে হাতিয়ে নিয়েছেন এক লক্ষ টাকা । আবার স্বাস্থ্য শাখায় রাহয়ান নামের আর এক কর্মচারীর কাছে থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে শাখা প্রধান করার প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে ডাবল বিল করে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মচারীদের এক শাখা অন্য শাখায় বদলি করার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের কাছে সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্তের হিসাবের ফাইল ও তার তিন পদোন্নতি যোগদানে কাগজপত্রের ফাইল দেখতে চাইলে তিনি জানান, সবার ফাইল থাকলেও জাহাঙ্গীর কবির শান্তর ফাইল তাহার কাছে নেই। উনি নয় মাস আগে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছেন পরে আর ফেরত দেননি আমাকে। এবিষয়ে সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবি শান্ত বলেন, আমার নিজস্ব ফাইলটি আমি নয় মাস আগেই নিয়ে এসেছি ফেরত দেওয়ার মনে ছিল না। এটা তেমন গুরুত্বপূর্ন বিষয় না, তাই আমার কাছেই রেখে দিয়েছি। আজকে আবার ফেরত দিবো। তিনি আরো বলেন, যে সিটি কর্পোরেশনের জন্মনিবন্ধন শাখায় চাকরী দেওয়ার কথা এবং এক শাখা অন্য শাখায় বদলি জন্য টাকা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার নামে যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আপনারা যা পারেন তাই লিখেন কোন সমস্যা নাই।এবিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার কাছ থেকে শান্ত’র তিন পদোন্নতির বিষয়ে এবং তার বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্ত তিন পদোন্নতি পেলেও তিনি চতুর্থ গ্রেটের বেতন পান। তবে কিভাবে ৩ পদোন্নতি নিয়েছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন দ্বায়িত্ব নিয়েছি, তাই সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্তর বিষয়ে আমি এতো কিছু জানিনা, বিষয়টি শুনলাম ,যদি কোন লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং তিনি তিন পদোন্নতি বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।