এম এইচ মুন্না : কাস্টমস এক্সাসাইজ ও ভ্যাট "রাজারবাগ সার্কেল" অফিসটি যেনো দুর্নীতির মহোৎসবে মেতে উঠেছে।এ সার্কেল'র খোদ রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহককে অবৈধ সুবিধা প্রদানের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার যেনো শেষ নেই।
খোদ কর্তাদের এহেন গাফিলতিতেই সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হতে খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশে প্রায় দেড় শতাধিক ফার্নিচার দোকান। প্রতিটি দোকানে গড়ে দৈনিক বিক্রি হয় দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা, গড়ে মাসে প্রায় ৩৫ থেকে ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু দোকান মালিকের সাথে ভ্যাট কর্মকর্তাদের গোপনে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে অনুলিপি রসিদ বইয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় মাসিক বিক্রি মাত্র আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা। সরকারি ভ্যাট হরিলুট হলেও স্বাভাবিক গতিতেই মাসোয়ারা উৎকোচ। তবে কারখানা ভেদে এই উৎকোচের পরিমান কম বেশী হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ চাকরি নেয়ার পর রাজস্ব কর্মকর্তা কোহিনুর বেগম নিজস্ব কৌশলে গ্রাহকদের সাথে মাসোয়ারা সমঝোতার মাধ্যমে নিজের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই অনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে যে সব গ্রাহকের সরকারি নীতিমালা অনুসারে ভ্যাটের পরিমাণ বেশি হয় তাদেরকে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অসৎ উপায় বাতলে দিয়েই মাসিক চুক্তিতে রফাদফা চলে গতানুগতিক।এতে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারালেও অসাধুরা ফেঁপে উঠেন অবৈধ সম্পদে। জানা যায়, রাজস্ব কর্মকর্তা কোহিনুর বেগম কখনো বিভাগীয় কর্মকর্তা আবার কখনো গ্রাহকদের মামলার ভয় দেখিয়েও উৎকোচ নিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে অত্র সার্কেলের আওতাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সাথে কথা হলে তারা দৈনিক গণতদন্ত'কে বলেন, সরকার রাজস্ব হারালেও অনেকেই ফেঁপে উঠছেন অবৈধ সম্পদে। আবার তাদের দেখানো পথে না হাটলেও বিপদ! পড়তে হয় নানান অভিযান জটিলতায়। দুর্নীতি আর অনিয়মের এই উৎসবে নিয়মানুযায়ী ভ্যাট প্রদান করা প্রতিষ্ঠান গুলোও এখন ঠিকমত ভ্যাট প্রদানে আস্থা পাচ্ছে না ।
একাধিক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় প্রতিটি দোকানে রয়েছে একটি করে অনুলিপি রসিদ বহি যা ভ্যাট কর্মকর্তাদের পরামর্শেই রাখা হয়। এতে সারা মাসে বিক্রি দেখানো হয় এক বা দুই দিনের বিক্রির সমান। এভাবে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। আবার কোনো কারখানার মালিক মাসিক মাসোহারা ঠিকমত না দিলে ওই দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়। কিছুদিন আগেও একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয় বলেও একজন কর্মচারী জানায়।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকান ম্যানেজার জানান, নতুন আইনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে গেলেও রাজারবাগ সার্কেল অফিসটিতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়। এই সার্কেলের আওতাধীন কয়েকটি হোটেল রেস্তোরা থেকে প্রতি মাসে চুক্তিতে বিপুল পরিমাণ টাকা উৎকোচ আদায় করে থাকেন রাজস্ব কর্মকর্তার পরিচয়ে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই সার্কেলের আওতাধীন একটি হোটেল এন্ড রেস্তোরার দৈনিক বিক্রি গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে মাসে ওই রেস্তোরার ভ্যাট/মূসক আদায় হওয়ার কথা দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। অথচ এখান থেকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে আদায় করা হয় নামে-মাত্র টাকা। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন সেবা খাত থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে যে পরিমাণ ঘুষ আদায় করা হয় তার সিংহভাগই রাজস্ব কর্মকর্তার পকেটস্থ হয় এবং বাকিটা খরচ হয় আনুসঙ্গিক খাতে। তন্মধ্যে এই সার্কেলে কর্মরত সকলের দুপুরের খাবারের আয়োজনও রয়েছে।
এবিষয়ে রাজারবাগ সার্কেল'র রাজস্ব কর্মকর্তা কোহিনুর বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন,
এসকল ফার্নিচারের দোকানে মাঝেমধ্যে তো বেচা-কেনাই হয়না। বিক্রি হয় তবে তা' খুবই সামান্য।
এব্যাপারে রাজারবাগ এলাকার একাধিক সচেতন নাগরিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।