ফৌজি হাসান খান রিকু
স্টাফ রিপোর্টার
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে কালাচান সরদার (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিবেশী দুই যুবক। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের ছাতি মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কালাচান সরদার উপজেলার উত্তর হলদিয়া এলাকার রশিদ সরদারের ছেলে।
এ ঘটনায় ৪ নারীকে আটক করেছে পুলিশ। বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে কালাচানকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেশীরা জানান। কালাচান একটি সিগারেট কোম্পানির ডেলিভারির কাজ করতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম চার কন্যাসন্তানের দরিদ্র পিতা কালাচানকে হারিয়ে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
কালাচান সরদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারী) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মারামারির ঘটনায় আহত অবস্থায় কালাচান সরদারকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মাথায় আঘাতের গুরুতর জখম ছিল। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। আর্থিক সমস্যা থাকায় তাঁরা নিয়ে যেতে পারেননি। রাত আড়াইটার দিকে লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কালাচান সরদারের সঙ্গে তাঁদের প্রতিবেশী বাবু ও হিরুদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। গতকাল বিকালে তার জেরে বাবু ও হিরু কালাচানদের বাড়িতে হামলা চালান। কালাচান বিষয়টি জানতে পেরে জমির কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে যান। ইউপি সদস্যকে না পেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। সে সময় বাড়ির পাশের রাস্তায় কাঠের চেলা দিয়ে বেদম পেটানো হয় তাঁকে। স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে পালিয়ে যান বাবু ও হিরু। মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে মারা যান কালাচান।
প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান, কালাচানের সাথে প্রতিবেশী নিজাম সরদার ও তার ভাই নুর ইসলাম সরদারের সাথে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। অভিযুক্ত হিরু নিজাম সরদারের ও বাবু নুরু ইসলাম সরদারের ছেলে। হিরু ও বাবু মাদক মামলার আসামি হিসেবে মঙ্গলবার আদালতে হাজিরা দিতে যায়। সেখান থেকে এসে কোনো কারণ ছাড়াই কালাচানের বাড়ির বেড়া ভেঙে ঘরে হামলা করে। এ সময় কালাচানের সেজো মেয়ে সাদিয়া বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর করে হিরু ও বাবু। পরে তারা কালাচানকে বাড়ির সামনের রাস্তায় পেয়ে কাঠের চ্যালা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মাথাসহ শরীরের নানা স্থানে আঘাত করে।
প্রত্যক্ষদর্শী মনির হোসেন বেপারী বলেন, কালাচান আমাদের সাথে মসজিদে জামাতে আসর নামাজ পড়ে আসে। এরপর সে বাড়িতে গিয়ে শুনতে পায় হিরু ও বাবু বাড়িঘরে হামলা করেছে। এরপর সে বাড়ির দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন সরদারের বাড়িতে যায়। এ সময় ইউপি সদস্য শাহিন বাড়িতে ছিলেন না। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে কালাচানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হিরু ও বাবু। কালাচানকে রক্ষা করতে গেলে হিরু-বাবু আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১ টার দিকে মারা যায় কালাচান।
নিহতের মেয়ে সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। বাবার সম্পত্তি দখলের জন্য হিরু, বাবুরা চেষ্টা করছেন। বাবা তাঁর সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সেই বিরোধের জেরে বাবাকে ইচ্ছেমতো পেটাল। আমাদের চোখের সামনে বাবাকে মারতে মারতে মেরেই ফেলল। আমরা বাবার হত্যার বিচার চাই।’
লৌহজং থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাবুর স্ত্রী মাবিয়া বেগমকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।