শামীম চৌধুরীঃ
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেটের সাথে প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি সকলের একটা নিবিড় সম্পর্ক দেখা যায়। তাহা ছাড়া ইন্টারনেট প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষে আমাদের অবস্থান। প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাব দেখছি আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের মাঝে।
করোনা কালীন অনলাইন ক্লাসের অজুহাতে প্রায় সকল শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোন। সময়ের প্রয়োজনে হয়তো অভিভাবক বাধ্য হয়ে যন্ত্রটি আদরের পুত্র-কন্যার হাতে তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেটা আর ফেরত নিতে পারছেন না প্রায় ৯০% অভিভাবক। নিতে গেলেই রিয়েক্ট, অভার রিয়েক্ট।
ইদানিং অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ধ্যান-জ্ঞান ফেসবুকিং, চ্যাটিং। পড়াশোনায় নেই কোন মনোযোগ। মা-বাবা কিছু বললেই ক্ষেপে যায়। পড়াশোনার কোন বালাই নেই। কেউ কেউ ঘরের দরজা বন্ধ করে এমন ভান করে যেনো প্রচুর পড়াশোনা হচ্ছে! রাত্রি ২টা পর্যন্ত জেগে থাকে,,,,ভাবখানা এমন খুব পড়াশোনা করছে। কেউ কেউ বলে সন্ধ্যায় পড়তে ভালো লাগে না; রাত ১২টার পর খুব ভালো করে পড়াশোনা করা যায়। সবই যে শুভংকরের ফাঁকি!
প্রতিষ্ঠানে মোবাইল আনা নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীরা তা আনছে। কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের পাশের দোকানগুলোতে টাকা দিয়ে জমা রেখে ছুটির পর তা ফেরত নিচ্ছে। মাঝে মাঝে সহকর্মীরা দুয়েকটা মোবাইল জব্দ করেন। অভিভাবক ডেকে সর্তক করা হয়, মুচলেকা নেওয়া হয়। দিন যায় মাস যায় আবারও সেই পুরনো চেহারা। অসহায় শিক্ষক, অসহায় অভিভাবক।
আরেকটি বিষয় খুবই পীড়াদায়ক! কিছু শিক্ষার্থী নির্লজ্জ বেহায়ার মত পরস্পরকে খুবই অশ্লীল, একেবারে আপত্তিকর কথাবার্তা বলছে, আবার কেউ কেউ বেঞ্চে, দেয়ালে, ওয়াশরুমে তা লিখছে। অশালীন, অশ্রাব্য, অপাঠ্য, আপত্তিকর এই শব্দগুলো কোথা হতে শিখছে আমার বোধগম্য নয়।
ইদানিং কোন কোন অভিভাবক সন্তানের ভুল খুব কম উপলব্ধি করেন। তার সন্তান যে ভুল করতে পারে বা অন্যায় করতে পারে তা মানতে রাজি নন। শিক্ষার্থীর অমার্জনীয় ভুলের শাসন করলেও শিক্ষকের ওপর ক্ষেপে যান। অভিভাবক ভুলে যান শিক্ষক ঐ শিক্ষার্থীর পিতার মতই।
আবার এমন অভিভাবকও পাই যারা বলেন সন্তান আমার, মানুষ করার দায়িত্ব আপনাদের। ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা দরকার তাই তাই করবেন, প্রয়োজনে শাস্তি দিবেন আমার কোন আপত্তি নেই।
অতীব দুঃখের সাথে এটাও বলতে হচ্ছে,, কিছু সংখ্যক শিক্ষক শাসনের নামে বাড়াবাড়ি করেন, শারীরিকভাবে প্রহার করেন। আবার কেউ কেউ তাদের কাছে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে চাপে রাখেন, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন,,,অযত্ন অবহেলা, সেই সাথে পাঠদানে আন্তরিকতার অভাব তো আছেই।
সবমিলিয়ে সামনের অনাগত দিনগুলোতে শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কোন দিকে যাবে কে জানে!