1. info@dainikgonatadanta.com : দৈনিক গণতদন্ত :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
বিজ্ঞাপন:
জরুরী নিয়োগ চলছে, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, ক্যাম্পাস ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি বা সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

শুধু ঘটনা নয়, পুড়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎও

রিপোর্টারের নাম :
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

এম এইচ মুন্না

শ্রমিকের জীবন এখানে যেন কাগজের মতোই মূল্যহীন। গ্যাস সিলিন্ডার আর যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে প্রতিনিয়ত যারা পোড়াচ্ছেন তাদের জীবন, তাদের স্বপ্ন—তারা বসে আছেন মালিক নামের একদল বেনামী অথচ দুর্বার ক্ষমতাধর পুঁজিপতির ছায়ায়। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে পরপর দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা আমাদের এক করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে বাস্তবতায় শ্রমিকের মৃত্যু শুধু সংখ্যা, দগ্ধ হওয়া একটি “দুর্ঘটনা”, এবং দায় চাপিয়ে দেওয়ার খেলা একটি চিরাচরিত ‘প্রতিষ্ঠানিক নিয়ম’।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইপিজেডের সনিক নামের খেলনা কারখানায় ডায়াস্টিক যন্ত্র বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন দুই শ্রমিক—লিটন চন্দ্র রায় (২৫) ও দেলোয়ার হোসেন (২৮)। একই দিন ভোরে ইপিজেড সংলগ্ন এক ভাড়া বাসায় রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হন দুই বোন—সুইটি আক্তার ও তাজকিনা আক্তার। চারজনকেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এটা কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি, যেটা মালিকপক্ষের চরম অবহেলা, লোভ এবং সরকার ও প্রশাসনের নীরব সম্মতির ফসল? এই তো মাত্র ক’দিন আগে, ৬ এপ্রিল সনিক কারখানার একই যন্ত্র বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যান দুই শ্রমিক—খায়রুল ইসলাম ও রমজান আলী। এরপরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। হয়নি যন্ত্র পরিবর্তন, হয়নি পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা, হয়নি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ।

শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, ২৪ ঘণ্টায় তিন পালায় নিরবচ্ছিন্ন কাজ চলছে। অতিরিক্ত চাপ, যন্ত্রের অতিরিক্ত গরম, এবং নিরাপত্তার অভাব—সব মিলিয়ে কারখানাটি যেন একটি চলন্ত বিস্ফোরক হয়ে উঠেছে। অথচ, মালিকপক্ষ নিশ্চুপ। তাদের নিকট দায়বদ্ধতার কোনো বোধ নেই, মানবিকতা নেই, আছে শুধু উৎপাদন আর লাভের চূড়ান্ত হিসাব। আর প্রশাসন? সনিক কারখানার মহাব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। কী অসহায় নির্লজ্জ চিত্র!

অন্যদিকে, বাসার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নতুন কিছু নয়। কিন্তু কেন নিয়মিত নিরাপত্তা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই? ইপিজেডের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সংলগ্ন এলাকায় এমন বিস্ফোরণ একাধিকবার ঘটলেও কেন প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছে না? কোথায় জেলা প্রশাসন? কোথায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের নজরদারি?

এখন সময় এসেছে কঠোর জবাবদিহির। কোনো মালিক যেন আর শ্রমিকের মৃত্যুতে হাত ধুয়ে সাফ হয়ে না যেতে পারে। যে কারখানায় একজন শ্রমিকও মারা যান, তার কার্যক্রম বন্ধ রেখে পূর্ণ তদন্ত না হলে এই মৃত্যুগুলো থামবে না। শুধু তা-ই নয়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই মৃত্যুর দায় নিতে হবে। কারখানা মালিকদের ওপর জরিমানা নয়, সরাসরি ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। ক্ষতিপূরণ শুধু টাকার অঙ্কে নয়, পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই দিতে হবে।

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড যেন আরেক ‘তাজরীন ফ্যাশন’ বা ‘রানা প্লাজা’ না হয়। শ্রমিকের ঘামে গড়া বাংলাদেশের রপ্তানি খাত—এখন রক্তে রঞ্জিত। এই রক্ত কি আর আমাদের বিবেক নাড়া দেয় না?

লেখক:
এম এইচ মুন্না
প্রধান সম্পাদক, দৈনিক গণতদন্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট