সাইদ গাজী , সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
পাট উৎপাদনে ফরিদপুর জেলা দেশের ১ নম্বরে। তবে পাট ও পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। মৌসুমে এখানে মোট আবাদী জমির ৮০/৯০ ভাগ জমিতে পাট চাষ হয়। পাট চাষের জন্যে শতভাগ বীজ অন্যত্র থেকে ক্রয় করতে হয়। এর পেছনে অনেক অর্থ এবং সময় নষ্ট হয়। আমদানির বেশিরভাগ বীজ আসে ভারত থেকে। তাই আমদানি কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পাট অধিদপ্তর। আর প্রথম বছরেই পাটবীজ চাষ সাফল্যের মুখ দেখেছে সালথা উপজেলার পাটবীজ চাষিরা। শতকপ্রতি খরচের চেয়ে কৃষক প্রায় ৫গুন লাভ হবে। মাত্র ১০ একর জমিতে পাটবীজ চাষ করে বাজীমাত করেছে চাষিরা। ব্যাপকহারে পাটবীজ চাষ হলে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র বিক্রি করা সম্ভব।
উপজেলা পাট অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় দেশিয় পাটের বীজ উৎপাদনের লক্ষে ১০ একর জমিতে নাবী পাটবীজের আবাদ হয়েছে। এবছর উপজেলায় নাবী পাটবীজের আবাদ করেছেন ৯৩জন পাটচাষি। এর মধ্যে জেআরও ৫২৪ ও সবুজসোনা জাতের পাটবীজ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বীজের ফলন ভালো হবে। চাষীদের মধ্যে মোক্তার মোল্যা, মিরাজ মোল্যা, মোস্তফা মাতুব্বর, নান্নু সর্দার অন্যতম। এর মধ্যে মোক্তার মোল্যার প্রায় ২০ হাজার টাকার বেশি পাটশাক বিক্রি করে চমক সৃষ্টি করেছেন।
কয়েকজন পাট চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, আমরা কখনো পাটবীজ চাষের কথা চিন্তাও করি নাই। এবছরই প্রথম নাবী পাটবীজ চাষ করেছি। আর কিছুদিন পর বীজ ঘরে তুলতে পারবো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে পাটবীজ চাষ করে আমরা লাভবান হবো। উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চলতি বছর প্রণোদনা হিসেবে আমাদের শুধু বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও সার, কিটনাষকসহ পরিচর্যা খরচ প্রোনদনা দিলে পাটবীজ চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।
সারা বাংলাদেশের কৃষক প্রতিনিধি ও বিজেআরআই এর মনোনীত সদস্য কৃষি উদ্যোক্তা মুক্তার হোসেন মোল্যা বলেন, সোনালী আশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর। আমি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার একজন চাষি। আমাদের উপজেলা পাট অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে আমি ১একরের কিছু বেশি জমিতে পাটবীজ চাষ করেছি। প্রচুর ফল আসছে, আমি আশা করছি এখান থেকে ১০/১২ মন পাটবীজ পাবো। আমি প্রথমে প্রায় ২০ হাজারের বেশি টাকার পটশাক বিক্রি করেছি। বীজ সংগ্রহ করার পর, পাটের আশঁ ও পাটকাটি পাবো। পাটবীজ চাষে তেমন কোন খরচ সেই, সব কিছু মিলিয়ে এখান থেকে অন্য ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবো।
তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশ পাটচাষি সমিতির সভাপতি হিসেবে সবাইকে অনুরোধ করবো আমরা যেন পাটবীজ চাষে আরও আগ্রহী হই। ভবিষ্যতে আমাদের যেন বাইরের দিকে না তাকিয়ে থাকতে হয়। পাট উৎপাদনে ফরিদপুর জেলা ১ নম্বরে রয়েছে। পাটবীজ চাষে সালথা উপজেলা কে আমরা ১ নম্বরে নিয়ে আসবো। ইনশাআল্লাহ আমি নিজেও আগামীতে এর চেয়ে বেশি পাটবীজ চাষ করবো।
উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারন প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় এই প্রথম নাবী পাটবীজ উৎপাদন প্রকল্প দিয়েছেন পাট অধিদপ্তর। এ বছর ১০ একর এর জন্য নাবী পাটবীজ বরাদ্দ দিয়েছেন, কিন্তু রাসায়নিক সারের কোন বরাদ্দ ছিলো না। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করে ৯৩ জন কৃষক এর মাঝে নাবী পাটবীজ বিতরণ করা হয়। ফলন তুলনামুলক ভালো হয়েছে। চাষিরা মুলত বীজের জন্য পাট চাষ করলেও, পাটশাক, পাটের আঁশ, ও পাটকাঠি অতিরিক্ত বোনাস হিসেবে পাবে। আমরা আশা করছি আগামীতে উপজেলায় পাটবীজ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পাট চাষে বীজের জন্য আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমবে।