উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বাকরেরহাট এলাকায় অবস্থিত নিজাই খামার বালিকা দাখিল মাদ্রাসা নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির সুপার মোহাম্মদ আলী সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাদ্রাসা খোলা থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, সুপার প্রায় প্রতিদিনই দুপুর ১টার মধ্যেই মাদ্রাসা বন্ধ করে চলে যান। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও উদাসীনতার কারণে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় এমন অনিয়ম নিয়মিত ঘটে আসছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, তদারকি না থাকায় শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে জবাবদিহিতা কমে যাচ্ছে এবং শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১টার কিছু পরেই মাদ্রাসার গেটে তালা ঝুলছে। তবে গেটের ভেতরে একটি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একজন তরুণ গেট খুলে বের হন। তিনি নিজেকে সুপারের ছেলে লাদেন হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, “আমি মাদ্রাসার কম্পিউটারে অনলাইন কাজ করি। আমি কোনো কর্মচারী না, তবে মাদ্রাসায় একটি রুম ব্যবহার করি।”
এতে প্রশ্ন ওঠেছে একজন অপ্রশিক্ষিত ও অননুমোদিত ব্যক্তি কীভাবে মাদ্রাসার ভবনে অবস্থান করছেন এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ভেতরে ব্যক্তিগত কাজ করছেন?
অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ আব্দুল ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “আপনারা রিপোর্ট লিখে পাঠিয়ে দিন, আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করব। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ফোন বন্ধ থাকা বিষয়টিও দেখা হবে।”
এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকরা জানিয়েছেন, নিজাই খামার বালিকা দাখিল মাদ্রাসা এলাকায় নারী শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। অথচ একজন ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা ও স্বজনপ্রীতির কারণে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।