পুলক কুমার ঘোষ
স্টাফ রিপোর্টার
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নড়াইল সদরের সাথে কালিয়া ও নড়াগাতি থানার একমাত্র যোগাযোগ স্থাপনকারী কালিয়া সেতুর জন্য স্টিলের স্প্যান সেতুস্থলে আসতে শুরু করেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছেন, কয়েক মাসের মধ্যে স্প্যানগুলি সেতুতে স্থাপন এবং জনগনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। জানা যায়, সেতুটি ২০১৯ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর নকশায় ত্রুটি ও বালু বোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কায় নির্মাণাধীন পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় দুথবার নকশা পরিবর্তন, মাসের পর মাস কাজ বন্ধ থাকা, শুরু থেকেই অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে সেতুর কাজ করানো, সেতু নির্মাণে ধীরগতির কারণে ৬ষ্ঠ মেয়াদে ২০২৫ সালের মাঝামাঝিও সেতুর কাজ শেষ হয়নি। প্রথমাবস্থায় সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৬৫ কোটি টাকা। পরে নির্মাণ পরিকল্পনার ত্রুটিসহ বিভিন্ন কারণে ১০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৬১ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। বর্তমানে এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে ১৩৬ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে নড়াইল সদরের সাথে কালিয়া ও নড়াগাতি থানার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কালিয়ার বারইপাড়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর ৬৫১.৮৩ মিঃ লম্বা ও ১০.২৫ মিঃ প্রস্থ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুর কার্যাদেশ পাওয়া মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল এন্ড মোঃ মইনুদ্দীন বঁাশি জেভি ফার্ম-এর ২০১৯ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সে সময় মাত্র ২৩ ভাগ সম্পন্ন হয়। নির্মাণ কাজের এক বছর পর সেতুটি নীচু হওয়া, সেতুর পাইল ক্যাপ সংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন ত্রুটি ধরা পড়ায় সেতুর নকশা পরিবর্তনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। ফলে সেতুর কাজ ৬ মাস বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে ২০২০ এবং ২০২১ সালের বর্ষা মৌসুমে মাঝ নদীতে অবস্থিত নির্মাণাধীন ৯ নম্বর পিলারটি বালু বোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কায় পরপর দুথবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় পিলারটি পানির নীচে তলিয়ে যায়। ফলে নতুন করে সেতুর নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে এবং নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়। পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী সেতুর পিলারগুলো যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে জন্য পিলারগুলোর চারপাশে স্টিলের নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি এবং ৭, ৮, ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের তিনটি স্টিলের স্প্যান বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেতুর মাঝখানে বসানো হবে ৮৬ মিটার দীর্ঘ আর্চ স্টিলের নান্দনিক স্প্যান। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য দুথটি স্প্যানও স্টিলের। বাকি স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। প্রথম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুথপ্রান্তের সংযোগ সড়কসহ ব্রীজের অন্যান্য অংশের কাজ দেড় বছর আগেই সম্পন্ন হয়েছে।
কালিয়া শহীদ আব্দুস ছালাম ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোঃ আবু সাহিদ সপ্তাহে ৫ দিন নড়াইল শহর থেকে কালিয়ায় যাতায়াত করেন। তিনি জানান, জেলা শহর থেকে কালিয়া শহরের দূরত্ব ২৫ কিঃমিঃ হলেও নদীর কারণে যেতে সময় লাগে দুথঘন্টা। বৃষ্টি,ঝড় ও প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় পারাপার করতে হয়। অনেক সময় নৌকা পাওয়া যায়না, তখন মাঝিরা টাকা বেশি দাবি করে এবং যাত্রীদের সাথেও দূর্বব্যহার করে। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কৃষি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতে বেগ পেতে হয়। আমাদের দাবি কাজটি যেন দ্রুত শেষ হয়।
পরিবেশ ও উন্নয়নকমর্ী শাহ আলম বলেন, নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া বারইপাড়া সেতু নড়াইলবাসীর দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন। এ নদীটি দুথটি থানার সাথে নড়াইল সদরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যে কারণে চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নড়াইলের সার্বিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। সেতটিু চালু হলে নড়াইল সাথে গোপালগঞ্জ, বরিশাল এবং বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দক্ষিন-পশ্চিমা লের অন্যান্য জেলাও এর সুবিধা পাবে।
জানতে চাইলে নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কনক্রিট এন্ড স্টিল টেকনোলজি লিঃ এর এজিএম মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, স্টিলের স্প্যানের মালামাল আসতে শুরু করেছে। এখনো সব অংশ পৌছায় নি। সেতুর ওপর তিনটি স্প্যান বসবে। একটি ৮৬ মিটার এবং অপর দুথটি ৪২ মিটার করে। বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজ একটু ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি আগামি ডিসেম্বরের আগেই সেতু জনগনের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, আগামি সেপ্টেম্বরে ৪২ মিটারের দুথটি স্প্যানের কাজ শুর হবে। সবচেয়ে বড়ো ধনুকের মতো বঁাকা স্টিলের স্প্যানটি এখনো এসে পৌছায়নি । এটা চিনে তৈরি হচ্ছে। আশা করছি ৩ মাসের মধ্যেই চলে আসবে। এ অর্থ বছরের মধ্যেই শেষ হবে। দুথঠিকাদার মিলে সামগ্রিক কাজের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান।
# ছবি সংযুক্ত।
পুলক কুমার ঘোষ
স্টাফ রিপোর্টার ,দৈনিক গনতদন্ত।
২৫/০৮/২০২৫
মোবাঃ