রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী , চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
চট্টগ্রাম, ৫ আগস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার — চট্টগ্রামে “আগ্রাসন বিরোধী ছাত্র ঐক্য” আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য বিজয় সমাবেশ, বিজয় মিছিল এবং ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে ‘৩৬ জুলাই’ এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের এক বছর পূর্তি।
চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেইট বিপ্লব উদ্যানে বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের শিশু, নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণ করেন সমাবেশে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আগ্রাসন বিরোধী ছাত্র ঐক্যের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, মেডিকেল কলেজ এবং স্কুল-কলেজের আহ্বায়করা ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ‘শেষ হয়নি যুদ্ধ’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বিপ্লব উদ্যান।
বক্তব্যপর্ব শেষে বিজয় মিছিল শুরু হয়, যা ২ নম্বর গেইট থেকে জিইসি, ওয়াসা, টাইগারপাস, সিআরবি হয়ে নিউমার্কেট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘জুলাইয়ের জন আকাঙ্ক্ষার ঘোষণা’ পাঠ করা হয়।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য ১৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
১) ভারতকে শত্রু রাষ্ট্র ঘোষণা
২) ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল
৩) পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার
৪) ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন
৫) আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান
৬) মার্কিন, ব্রিটিশ ও ভারতীয় সামরিক চুক্তি বাতিল
৭) এই তিন দেশের বিনিয়োগ চুক্তি বাতিল ও দূতাবাস বন্ধ
৮) জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ
৯) জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বন্ধ
১০) কৌশলগত সম্পদ বিদেশি শক্তির হাতে না তুলে দেওয়া
১১) সংস্কৃতিগত আগ্রাসনমুক্ত, সময়োপযোগী ও বিশ্বাসভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা
১২) শিল্প নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি
১৩) স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার
১৪) তেল-গ্যাস-জ্বালানির উপর বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্য রোধ
১৫) ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সংবিধান বাতিল করে ইসলামিক সংবিধান প্রণয়ন
১৬) সকল কালো আইন বাতিল
সমাবেশ শেষে আয়োজকরা জানান, এই আন্দোলন কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” স্মরণ করে তাঁরা আগামীতে আরও বৃহত্তর ছাত্র-জনতার ঐক্য গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি ছিল সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের একটি দৃঢ় বার্তা এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি নিয়ে নতুন পথচলার ঘোষণা।