এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের বোদা মাড়েয়া করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে ভয়াবহ নৌকাডুবিতে ৪৭ দিন পর নিখোঁজ জয়া রাণী (৪) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। গত শুক্রবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে আউলিয়া ঘাটে নৌকা ডুবে যাওয়ার স্থানে পাথর শ্রমিকরা পাথর উত্তোলনের সময় শিশুটির অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এ খবর দেয়।
পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। একি স্থানে গত বুধবার নিখোঁজ ভূপেন্দ্র নাথ পানিয়ার লাশ পাওয়া যায়। এ নিয়ে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ জন।
এ ব্যাপারে বোদা থানা অফিসার ইনচার্জ সুজয় কুমার জানান, আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ শিশু জয়া রাণীর লাশ এটি। জয়া রাণী পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ঘাটিয়ারপাড়ার বীরেন্দ্রনাথের মেয়ে। জয়ার পরিহিত কাপড় দেখে তাঁর আত্মীয় স্বজনরা মরদেহ সনাক্ত করেছেন বলে তিনি জানান।
খবর পেয়ে জয়া রানীর বাবা সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ঘাটিয়ার পাড়া গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ রায় ও মা আলো রানী ঘটনাস্থলে এসে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। রাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায়, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, ইউএনও’র উপস্থিতিতে বাবার নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়।
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আনসার মো. রেজাউল করিম সামীম জানান, আউলিয়া ঘাটে নৌকা ডুবে যাওয়ার স্থানে শিশুটির মাথা ও একটি হাত বিচ্ছিন্ন গলিত পঁচা লাশটি ভেসে উঠলে স্থানীয়রা দেখতে পায়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এ খবর দেয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় নৌকাডুবির ঘটনায় করতোয়া নদী থেকে নিখোঁজ জয়া রানীর মরদেহ উদ্ধার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এর আগে বুধবার (৯ নভেম্বর) একই স্থান থেকে ভুপেন্দ্রনাথ রায় পানিয়া (৪২) নামের আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে উদ্ধার হওয়া মরদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে। এখনও উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের সুরেন (৬৫) নামের এক জন নিখোঁজ রয়েছে।
আলো রানী দুই মেয়ে চার বছরে জয়া রানী ও এক বছরের যুথি রানীকে নিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। নদীর মাঝখানে নৌকা ডুবির ঘটনায় তিনি বেঁচে ফিরলেও দুই মেয়েকে হারিয়ে ফেলেন। ঘটনার পর দিন যুথির লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু জয়া রানী নিখোঁজ ছিল।
উল্যেখ, গত ২৫ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট দিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকা ডুবিতে ৭২ জনের সলিল সমাধি ঘটে ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। মৃত ৭১ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৬ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের ২জন রয়েছেন। মৃত ৭১ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন, পুরুষ ১৯ জন এবং শিশু ২২ জন।