বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সময়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী মন্দাঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৬ সাল নাগাদ ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হারাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এরমধ্যে অন্তত দুই বছর এক তৃতীয়াংশ বিশ্ব অর্থনীতির খারাপ সময় যাবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। মহামারির পর সোমবার স্বশরীরে আবারও এই সভা শুরু হয়েছে।
সামনের দিনে বৈশ্বিক মন্দাঝুঁকি নিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী বছর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মন্দাঝুঁকি বেড়ে চলেছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, অন্তত দুটি অর্থবছরে এক তৃতীয়াংশ বিশ্ব অর্থনীতির খারাপ সময় যাবে। এ মন্দাভাবের কারণে এখন থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার ট্রিলিয়ন ডলার হারাবে বিশ্ব।
আইএমএফ বলছে- মহামারি করোনার কারণে বৈশ্বিক বাজারে যোগানের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফসল উৎপাদনও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অস্বাভাবিক হারে খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে। যার কারণে প্রতিটি দেশই অর্থসংকটে ভুগছে।
মন্দার প্রভাবের বিষয়ে সভায় বিশ্বব্যাংকের সভাপতি ডেভিড ম্যালপাস বলেন, এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে বাংলাদেশের মতো যেসব উন্নয়নশীল দেশ বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণ নেয়, তাদের অনেকেই এই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। ফলে বহুজাতিক ব্যাংক উন্নয়ন সহযোগীদের একত্রে নিয়ে সেই জায়গায় গুরুত্ব দেওয়ার এখনই সময়। ৪৪ বিলিয়ন ডলারের কিস্তি যে সময়মতো পরিশোধ দেওয়া হবে না সে ব্যাপারেও তাদের স্বস্তি দিতে হবে।
শুধু আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংক নয়, খোদ জাতিসংঘও বিশ্ববাসীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে- বিশ্বমন্দা আসন্ন। আর এতে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে- মুদ্রা, রাজস্বনীতি ও সুদের হার বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণে বিশ্ব একটি বৈশ্বিক মন্দা ও স্থবিরতার দিকে ক্রমেই অগ্রসর হচ্ছে। যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বেশি বিপদ বয়ে আনবে।
অবশ্য, এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মন্দার ধাক্কা সামাল দিতে জোরালো প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশের মানুষকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে শস্য আবাদের পরামর্শ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়িয়ে সঞ্চয়ী হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।