মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তাররা চলেন তাদের খেয়াল খুশি মতো, মানেন না তাঁরা সরকারি আদশে- বিধি নিষেধ।সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।এমন চিত্র হরহামেশাই দেখা যায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলাবাসীর একটিই মাত্র সরকারি হাসপাতাল। কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা হাসপাতালে আসেন সরকার নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। বর্তমানে সরকারি অফিস সময় সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত হলেও এই হাসপাতালের ডাক্তাররা আসেন সকাল ১০ টার পরে। দেশে বিদ্যুত ঘাটতি কমাতে এবং বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার কয়েকমাস যাবত দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি,স্বায়ত্বশাসিত অফিস সময় সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টার পরিবর্তে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নিয়ম থাকলেও চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই তা মানছেন না। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা কিংবা দুই ঘন্টা পর শুরু হয় এখানকার যাবতীয় কার্যক্রম, যা সরকারি সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর শামিল।অথচ উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে অনেক আগেই চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে এসে ভীড় করেন রোগীরা। দুপুরের পর থেকে অনেক চিকিৎসককে আর নিজেদের কক্ষে পাওয়া যায় না। অফিস ফাঁকি দিয়ে এ সময় বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে রোগী দেখে সময় কাটান তাঁরা।চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ছাইফুল, সোহাগ, মাহমুদ, ফরিদা, সেতু, গোলেজান সহ অনেকে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এ হাসপাতাল শুধু নামেই, এখানে ঠিক সময়ে ডাক্তারদের যেমন পাওয়া যায় না তেমনি প্যারাসিটামল আর এন্টাসিড ট্যাবলেট ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে টাকা দিয়েই সব ওষুধ কিনতে হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসকদের কক্ষে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবস্থান করার নিয়ম না থাকলেও এক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটছে প্রতিনিয়তই। সকালেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে এসব প্রতিনিধিরা দলবেঁধে কারণে-অকারণে ভীড় জমান চিকিৎসকদের কক্ষে। ওষুধ কোম্পানীর লোকজনের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকিট হাতে অপেক্ষায় থাকতে হয় রোগীদের। এতে সেবা নিতে আসা রোগিরা বঞ্চিত হচ্ছেন সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে।সকাল ৮টা থেকে রোগী দেখার কথা থাকলেও বুধবার (২ নভেম্বর) সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বহির্বিভাগের দরজা খোলা থাকলেও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কোনো ডাক্তারকে দেখা যায়নি। অপরদিকে দেখা যায়, জরুরী বিভাগে একজন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২ নভেম্বর বুধবার হাসপাতালের একটি বাচ্চাকে চিকিৎসার অবহেলার কারণে নার্সদের সাথে রোগীর স্বজনদের বাগবিতন্ডা করতে হয়। কর্তব্যরত একজন নার্স বলেন, হাসপাতালে এত রোগী চিকিৎসা সেবা দেওয়া অনেক কষ্টের। এখানে সব সময় একজন ডাক্তার থাকা উচিৎ এবং নেই কোন সিসি টিভির ব্যবস্থা, আমাদের নিরাপত্তার খুবই অভাব, এবিষয়ে আপনারা সাংবাদিক আপনারা উপরের স্যারদের সাথে একটু কথা বলেন, আর ওয়ার্ড বয় হিসেবে ছিলেন হারুনুর রশিদ।স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে ডাক্তারকে চেম্বারে পাওয়া যায় না। ডাক্তার তার নির্দিষ্ট রুমের মধ্যে থাকেন। রোগী আসলে ডাকা হয়,নয়তো পাশে বসা সহকারী দিয়েই চলে চিকিৎসা সেবা। রাতের বেলায় অনেক সময় কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ডিউটির বেশিরভাগ সময় নির্দিষ্ট রুমে থাকেন তাঁরা।বেশিরভাগ সময় হাসপাতালের ব্রাদাররাই সামলান এ বিভাগ। কিছু রোগিদের নামমাত্র চিকিৎসা দিলেও বেশিরভাগ রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে অথবা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওহিদুজ্জামানের খোঁজ না পেয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ট্রেনিংএ আছি, দায়িত্বে আছেন, রিজভী সাহেব, আপনি তার সাথে যোগাযোগ করুন। এব্যাপারে ডা. রিজভী সাহেব এর খোঁজ করে তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি, দেখা হয় মাঝ বয়সী এক দিদির সাথে, তার কাছে জানতে চাইলাম ডা.রিজভী সাহেব কোথায়? তিনি জানালেন, স্যার আজ আসেনি, তিনি বাসায় আছেন, আজ তিনি আসবেননা। এবিষয় জানার জন্য ডা. রিজভী সাহেবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।এ ব্যাপারে যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে সকাল ৮ টা থেকে অফিস সময়। আর এইসব দেখার দায়িত্ব ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। যদি নির্দিষ্ট সময়ে কেউ অফিসে না আসেন তাহলে তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।