স্টাফ রিপোর্টার:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পৌর এলাকার কৃষ্ণপুর, নারান্দিয়া ও পুরুলিয়া গ্রামের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কে. এন. পি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার মহান উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের মুখে। ছাত্রসংখ্যা কমে গেছে ভয়াবহভাবে, শিক্ষার পরিবেশ নেই বললেই চলে, আর স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা সবকিছুকে আরও করুণ অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে।
সরকারি এমপিওভুক্ত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৭ জন, অথচ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১১! কোন বছর পাঁচজন, কোন বছর তিনজন আবার কোন বছর নয়জন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। শিক্ষার প্রতি শিক্ষকদের চরম অবহেলা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির গাফিলতির কারণে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এমনকি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকেও তেমন কোনো মনিটরিং করা হয় না, ফলে বিদ্যালয়ের দুর্দশা আরও প্রকট হচ্ছে।
বিদ্যালয়টি পৌরসভার মধ্যে হলেও যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি পরিকল্পনাহীন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা একতলা বিশিষ্ট এবং কোনো প্রকার মানসম্মত কাঠামো নেই। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রের অবস্থাও শোচনীয়। অথচ এসব সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রাশিদা খাতুনের কাছে বিদ্যালয়ের দুরবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। টানা দুই দিন বিদ্যালয়ে গিয়েও তার দেখা মেলেনি। এরপর তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। কিছুক্ষণ পরই সাংবাদিকদের ফোন করে লোহাগড়া পৌর এলাকার বিএনপির এক নেতা ও একজন সাংবাদিক , যিনি রাশিদা খাতুনের আত্মীয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “বিষয়টা যেন সেভাবে দেখা হয়।” এতে স্পষ্ট যে, বিদ্যালয়ের দুর্নীতির পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, “যখন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমল বালা ছিলেন, তখন বিদ্যালয়টি ভালোভাবে পরিচালিত হতো। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া মনিটরিংও কম হয়, ফলে বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে এলাকাবাসী হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইলেও, ভালো পরিবেশের অভাবে তারা বাধ্য হয়ে অন্যত্র ভর্তি করাচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে।
শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও, এই বিদ্যালয়ে কোনো সুফল পৌঁছাচ্ছে না। বরং দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
(চলবে…)
এটি ছিল প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে বিদ্যালয়টির অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হবে।