নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাষ্ট্রযন্ত্র যখন জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকার কথা, তখন কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তার দুঃসাহসিক দুর্বৃত্তি গোটা প্রশাসন কাঠামোকে গিলে খাচ্ছে ভিতর থেকে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে কর্মরত সহকারী কমিশনার সায়েদ হাসান তাহের তেমনই একজন রাষ্ট্রীয় দুরাচার, যার ঘুষের লেনদেনের ভয়ঙ্কর দৃশ্য এখন চাক্ষুষ প্রমাণসহ পৌঁছে গেছে দৈনিক গণতদন্ত-এর হাতে।
দৈনিক গণতদন্ত-প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে দেখা যায়- সহকারী কমিশনার সায়েদ হাসান তাহের এক করদাতার সঙ্গে ঘুষের পরিমাণ নিয়ে প্রকাশ্য দরকষাকষিতে লিপ্ত। অঙ্ক চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই ফাইল খুলে স্বাক্ষর করে দেন তিনি। দৃশ্যপট এমন যে- ঘুষ যেন তার দাপ্তরিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ হয়ে উঠেছে; টাকা ছাড়া যেন কোনো ফাইল নড়ে না, কোনো স্বাক্ষর পড়ে না। এই চিত্র প্রশাসনিক শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি থুতু নিক্ষেপ।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তাহের কেবল ঘুষ গ্রহণেই সীমাবদ্ধ নন- বরং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে কৌশলে রাজস্ব ফাঁকির পথ তৈরি করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রভাব খাটিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিল এমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব গায়েব করে দিয়ে ব্যক্তিগত আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কর ফাঁকির এ চক্রে যুক্ত থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।
দপ্তর বদল হলেও নীতির পরিবর্তন হয়নি- যেখানে অফিসে বসেই জনগণের রক্ত-ঘামে অর্জিত করের টাকাকে নিজের ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক স্বার্থে খরচ করেন তিনি।
এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ কেবল একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত লোভের দলিল নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক সংস্কৃতির নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। এমনকি দৃশ্যতঃ মনে হয়- রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন নয়, বরং ফাইলের পৃষ্ঠায় স্বাক্ষরের বিনিময়ে টাকার বান্ডিল গ্রহণই যেন এই কর্মকর্তার ‘দাফতরিক রুটিন’।
সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই তাহের নিজস্ব গাড়িতে চলাফেরা শুরু করেন- যার বৈধ উৎস সম্পর্কে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। উত্তরার অভিজাত এলাকায় রয়েছে তার একাধিক নিজস্ব ফ্ল্যাট, এছাড়াও রাজধানী ও আশপাশে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ জমি, ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং অঢেল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করলে এক ভয়াবহ চোরাস্রোতের সন্ধান মিলে- যা বয়ে চলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যক্তিগত লোভের পকেটের দিকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন সদস্য দৈনিক গণতদন্তকে বলেন, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে কেবল রাজস্ব খাত নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রেই দুর্নীতির ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে- যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ভয়ংকর অভিশাপ হয়ে থাকবে।
এখানেই শেষ নয়.. চলবে।