স্টাফ রিপোর্টার :নির্মল ইন্দু সরকার
ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আই কে সেলিমউল্লা খোন্দকার এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বলেছেন “ঢাকা কলেজের আত্মত্যাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। ” তার স্ট্যাটাস নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
ঢাকা কলেজের আত্নত্যাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ তারাই ঢাকা কলেজ সহ ঢাকার সরকারি ৭ কলেজ খেয়ে দিলো-
ঢাকা কলেজ ১৮৪১ সালে সরকারি কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখানে ইন্টার, পাস কোর্স, অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি ছিলো। বাংলাদেশে প্রথম আইন বিষয় ডিগ্রি এ ঢাকা কলেজেই ছিলো। তৎকালীন পূর্ব বাংলায় সরকারি/বেসরকারি অন্য কোনো কলেজই ছিলো না। ঢাকা কলেজ এ উপমহাদেশের ১০ম প্রাচীন কলেজ বলে স্বীকৃত। পূর্ব বঙ্গে হাতোগোনা কিছু স্কুল ছিলো, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেট্রিকুলেশন পাস করে ইন্টার সহ উচ্চ শিক্ষার জন্য কোলকাতা যেতে হতো। সাধারণত জমিদার শ্রেণি ছাড়া এটি অন্যদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এসব বিবেচনায় ১৮৪১ সালে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ৮০ বছর পর ১৯২১ সালে এ বঙ্গের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ স্হাপিত। যে বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন করে। আর ঢাকা কলেজের বয়স ১৮৪ বছর। ইডেন কলেজ ১৮৭৩, বয়স ১৫২। ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ ১৮৭৪, বয়স ১৫১ বছর। শিক্ষা বলেন আর উচ্চ শিক্ষা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান চিন্তা করুন।
কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হল ঢাকা কলেজের নিজস্ব ভবন ও হল ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছেড়ে দিয়ে নিজেরা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে গেলো, মানে যাযাবর হলো। শিক্ষা ভবন হতে বঙ্গবাজার রোড এখনো “কলেজ রোড” নামে পরিচিত, কালের সাক্ষী। ঢাকা কলেজ লাইব্রেরির মূল্যবান ও বিরল সংগ্রহের ২৫ হাজার বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করা হলো। ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের বড় একটি সংখ্যা পর্যন্ত ধার দেওয়া হলো। তারা লিয়েনে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
ঢাকা কলেজে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইন্টার, পাস কোর্স ও অনার্স -মাস্টার্স পড়ানো হতো। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের লোভে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ ভর্তি হতে চাইবে না, তাই ঢাকা কলেজে পাস কোর্স ও অনার্স-মাস্টার্স ভর্তি বন্ধ করে শুধু ইন্টার চালু থাকলো। যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার পাস ছাত্র সরবরাহ করা যায়। অথচ আশ্চর্য হবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরনিকায় এসব সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকার সরকারি ৭ কলেজের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ৭টি ক্যাম্পাস মিলে ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকা কলেজকে কেন সবসময় বিসর্জন বা ত্যাগ শিকার করতে হবে?
১। সবার নিশ্চয়ই মনে আছে, বিশ্বের বৃহত্তম ‘আদমজী জুটমিল’ বন্ধ হলো। বেতন-বোনাস দাবি বা অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হাজার হাজার শ্রমিক চিড়া-মুড়ি নিয়ে ঢাকা অভিযান বা কাঁচপুর ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে অবরোধ করতো, বিশেষ করে ঈদের সময়। সব রাজনৈতিক দল এটিকে হুমকি মনে করতো। এসব কারণ আর নানান বোঝাপড়ায় নীরবে এটি বন্ধ হয়ে গেলো। তেমন প্রতিবাদ হয়নি বললেই চলে।
সরকারের ইচ্ছেয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মতিতে ঢাকার সরকারি ৭ কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল বিভাগের সকল সরকারি/বেসরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলো। এখনো বেসরকারি শতাধিক প্রতিষ্ঠান এর অধিভুক্ত। তাহলে সরকারি ৭ কলেজের সমস্যা?
প্রধান সমস্যা আদমজীর মতো হুমকি-
* সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রুটিন, দ্রুত ফলাফল, অন্যায্য ফি প্রত্যাহার, কর্মচারীদের অসহযোগিতা এসবের প্রতিবাদে মাঝেমধ্যে ভিসি ও প্রোভিসি অফিস ঘেরাও করে;
* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অভ্যন্তরীণ সিটি কর্পোরেশন এর রাস্তায় বাইরের গাড়ি চলাচল বন্ধ করলে যানযটে নাকাল হয় ঢাকাবাসী। ঢাকার সরকারি ৭ কলেজ এর প্রতিবাদে ৭ কলেজের সামনের রাস্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বারবার তাদের সিদ্ধান্ত হতে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু ৭ কলেজ যদি ক্যাম্পাস ভিত্তিক এক ইউনিট হয়, ঢাকার প্রাণকেন্দ্র তাদের নিয়ন্ত্রণ আরো সুদৃঢ় হবে। সরকার বলেন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, নিঃসন্দেহে সবসময় হুমকিতে থাকতে হবে।
* বেশ কয়েকবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারামারি হয়েছে ;
*ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (আওয়ামী ও বিরোধী) একাংশের ধারণা, ৭ কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি তৎকালীন ভিসি আরেফিন সাহেবের ইচ্ছেয় হয়েছে, এর বিরোধিতা করতে হবে। যদিও আরেফিন সাহেবের সময়কালে ও উনার সম্মতি অধিভুক্তি হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক ও মিডিয়ার প্রচারের কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে দেশের সকল সরকারি কলেজ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর প্রাইভেট সকল কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাখার নির্দেশনা দেন। এটি বাস্তবায়নে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আজাদ চৌধুরীর সাথে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশন এর এক সভা হয়। এসোসিয়েশন এর তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন বেগম ও মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার (আমি) সহ একটি প্রতিনিধি দলের সভায় সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও বাস্তবায়ন কমিটির ৬ জন ভিসি’র সাথে আমাদের সভাপতি ও মহাসচিবকে অন্তর্ভুক্তি ছাড়া আমরা সম্মত হইনি।
* সরকারি ৭ কলেজের দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি ও পরীক্ষার লাভজনক কাজকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো, এর বাইরের বড় একটি অংশ ৭ কলেজের অধিভুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
* প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভিসি, প্রোভিসি, ট্রে