1. info@dainikgonatadanta.com : দৈনিক গণতদন্ত :
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৯:২১ অপরাহ্ন
বিজ্ঞাপন:
জরুরী নিয়োগ চলছে, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা,উপজেলা, স্টাফ রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, ক্যাম্পাস ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি বা সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

ফুটপাতে ফলের দোকান করে মাস্টার্সে ১ম শ্রেণী পেল নবকুমার

রিপোর্টারের নাম :
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩
  • ৪১০ বার পড়া হয়েছে

 

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি:

 

দরিদ্র মেধাবীরা সুযোগ পেলেই হতে পারে দেশের অহংকার। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর আত্মপ্রত্যয়ের কাছে হার মেনেছে সকল দারিদ্রতা। জীবনের প্রতিটি বাঁকে দারিদ্রতার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবুও পিছু হটেনি। মনে সাহস ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে গেছে তার গন্তব্যে। সফলও হয়েছে। ফলের দোকানের পাশাপাশি পড়াশোনা করে ১ম শ্রেণী পেয়ে মাস্টার্স পাস করেছে নব কুমার দাস।

 

পঞ্চগড়ের বোদায় উপজেলা শহরের নিউমার্কেটের সামনে ফুটপাতে ফলের দোকান করে নব কুমার দাস। সে এবছর (২০১৯-২০ শিক্ষা বর্ষ) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে ১ম শ্রেণী (জিপিএ ৩.১১) পেয়ে মাস্টার্স পাস করেছেন। ২০১৯ সালে একই বিষয়ে ১ম শ্রেণী (জিপিএ ৩.২৮) নিয়ে অনার্স পাশ করেন। নব কুমার ২০১৩ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.১৯ ও ২০১৫ সালে জিপিএ ৩.৫০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। এখন তার লক্ষ্য বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক হওয়ার।

 

দরিদ্র বাবার ৩ ভাই-বোনের দ্বিতীয় সন্তান নব কুমার। বাবা দিনমজুর। বাবার রক্ত পানি করা টাকায় সংসার চলে না। তার উপর লেখা পড়ার খরচ যোগানো বাবার জন্য কষ্ট কর। নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে এবং বাবাকে অর্থিক সাহায্য করতে ফলের দোকান শুরু করি। কথাগুলো বলছিলেন সদ্য মাস্টার্স পাস করা নব কুমার দাস।

 

নব কুমার বলেন, “যুদ্ধ করেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্রতা আমার অহংকার। কারণ ক্ষুধার কষ্টেও সততা, নীতি-নৈতিকতা ধরে রেখে বড় হওয়ার চেষ্টা করছি। কষ্ট নিয়েই বড় হতে চাই। বড় হয়ে সমাজে দরিদ্র মানুষের মাঝে আলো ছড়াতে চাই। দারিদ্রতার কারণে কারও যেন পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায় সেই চেষ্টা করবো। দারিদ্রতা না থাকলে কষ্টের অর্থই বুঝতাম না।”

 

নব কুমার দাসের বাবা দেবেন দাস বলেন, “ছেলের রেজাল্টে আমি খুশি। ওকে খাওয়াতেই পারিনা আর পড়াশোনার টাকা দেয়াতো দুরের কথা। ছেলেটা নিজে দোকান করে পড়াশোনা চালাচ্ছে এবং আমাকেও অর্থিক সহযোগিতা করছে। সে নিজের চেষ্টায় ও অন্যের সহযোগিতায় এতদুর আসতে পেরেছে। সারাদিন ফলের দোকান করে রাতে পড়াশোনা করতো। নিজের পড়ালেখা পাশাপাশি ছোট ভাই এরও পড়াশোনা চালাচ্ছে। এখন একটা ভালো চাকুরী পেলে ও জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারবে।”

 

নবকুমারের দোকানে ফল কিনতে আসা বেলাল হোসেন ফুলাল বলেন, “নব কুমারের দোকান ছোট হলেও ওর দোকানে মৌসুমি দেশি ও বিদেশি ফল পাওয়া যায়। আমি নব কুমারের দোকান থেকেই সবসময় ফল কিনি। ওর দোকানে আপেল, কমলা, কলা, আঙুর, বেদানা, লিচু, খেজুর, পেঁপেসহ সব মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। লেখা পড়ার পাশাপাশি ও ফলের দোকান করে এত ভালো রেজাল্ট করায় এলাকাবাসী আনন্দিত।”

 

নব কুমারের দোকানের পাশে পানের দোকানদার ময়নুল জানান, “নব কুমার অতন্ত্য পরিশ্রমি ও মেধাবী। সে সততার সহিত ব্যবসায় করে। ওর এই রেজাল্টে আমি খুবই খুশি। আমার বিশ্বাস সে একদিন অনেক বড় হবে।”

 

বোদা পাইলট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল আলম সাবুল বলেন, “নব কুমার অতন্ত্য মেধাবী ও পরিশ্রমি ছেলে। ছোট বেলা থেকে ও আমার কাছে এসে পড়া লেখার বিষয়গুলো দেখিয়ে নিতো। আমি যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। ওর এ সাফল্যে আমি ভিষণ খুশি। আমি আশা করি সে তার লক্ষ্যে একদিন পৌছাবে।”

 

দারিদ্রতাকে জয় করে, কষ্টকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকার নাম জীবন। স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সব বাঁধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেকে আলোকিত করে আশপাশের মানুষকে আলোকিত করতে চান নব কুমার। তার এই সাফল্যে এলাকাবাসী যারপরনাই খুশি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট